বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিতর্কে যখন করোনা টিকা (২)

 

মোঃ রুহুল আমিন 


আতিমারী করোনার কারনে আমাদের দেশের স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে। অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি কার্যক্রম সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলছে তবে, সেখানেও দায়িত্ব পালনকারি ব্যক্তিগন করোনা আক্রান্তের একটা অজানা শঙ্কার মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরে গেলে তা ভালোভাবে বুঝা যায়। সরকার এই অজানা শঙ্কা থেকে দায়িত্ব পালনরতদের বের করে আনার চেষ্টা নিরন্তর চেষ্টা করছেন। দেশের আমজনতা ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বিদেশ থেকে টিকার ব্যবস্থা করেছে সরকার। ইতিমধ্যে আমাদের মহান স্বধীনতা যুদ্ধে অবদান রাখা বন্ধুরাষ্ট্র ভারত আমাদেরকে ২০ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে দিয়েছেন, যা গত ২১ জানুয়ারি দেশে এসে পৌঁছেছে। ২৫ জানুয়ারি সোমবার ভারতের সিরাম ইন্সটিটিউট থেকে বাংলাদেশের জন্য সরকারি অর্থে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার যে টিকা কেনা হচ্ছে, তার প্রথম ৫০ লাখ ডোজ ভারত থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। ২৬ জানুয়ারি থেকে যারা টিকা নিবেন তাদের অনলাইনে নিবন্ধন শুরু হয়েছে। ২৭ জানুয়ারি ২৬ জন ফ্রন্টলাইনারের শরীরে টিকা দেয়ার কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে।কিন্তু এই টিকা কে আগে, আর কে পরে নিবে এব্যাপারে ইতিমধ্যে দেশে বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি বিতর্ক তৈরি করছেন। সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে বিএনপি রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য এমন বিতর্ক তুলছে। আবার অনেকে বলতে চাইছেন দেশের আমজনতাকে টিকা দেয়ার পূর্বে মন্ত্রী ও ভিআইপিগণের উচিত আগে টিকা নেয়া, তারপর সাধারণ মানুষের মাঝে টিকা দেয়া। এমনও কেউ কেউ বলছেন সবার আগে সরকার প্রধান হিসাবে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে টিকা নেয়া উচিত। এরই মাঝে আমাদের অর্থমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন তিনি সবার আগে করোনার টিকা নিবেন। প্রশ্ন হচ্ছে এমন বিতর্কের হেতু কি? আর কেনইবা এই বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে? রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য মানুষের জীবন-মরণ সমস্যা নিয়ে এমন বিতর্ক কারো জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না। এতে দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তাই এখনই এমন বিতর্ক বন্ধ হওয়া উচিত বলে অভিজ্ঞ জনেরা মনে করেন।

যেকোন দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে দেশের সকল রাজনৈতিক দল ও মতের মানুষের অংশগ্রহন থাকা অপরিহার্য। দেশের সকল জনগন কোন দূযোর্গ বা ক্রান্তিকাল মোকাবিলায় এক হয়ে কাজ করলে যেকোন কঠিন পথ পাড়ি দেয়া সহজ ও সম্ভব। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয় দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫০ বছর পরও তা আমরা দেখতে পাচ্ছি না। আমরা বিরোধীতার ছলে বিরোধীতা করছি। যেকোন দেশের একটি বৃহৎ অংশের মানুষকে বাদ দিয়ে অথবা বিরোধীতা করে দেশের সার্বিক উন্নয়নে পদে পদে বাঁধার মুখে পড়তে হয়। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৫০ বছর আগে। আর এই সময়ে দেশ বিনির্মাণে আমরা মুক্তিযুদ্ধে সকলে মিলে যে, ঐক্যমত হয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম আজ তার বড় অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এদেশের ৫০ বছর পুর্তিতে জাতীর যে অর্জন হওয়ার কথা ছিলো আমরা তার চেয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছি। আজ আমাদের জিডিপি আরো বেশি হওয়ার কথা, কিন্তু তা কি আমরা অর্জন করেতে পেরেছি? বিষয়টি চিন্তার সময় এসেছে আজ। এবছর আমরা আমাদের দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে জন্মজয়ন্তী পালন করবো। কিন্তু এখনও আমরা জাতীর বৃহত্তর স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে নিজেরা নিজেদের বিরোধীতা করছি। এটা শুধু দুঃখজনকই নয় অনেক পরিতাপেরও বটে। আমরা দেখেছি স্বাধীনতার পর যে দল যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়েছেন তখন অন্য দলকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম পরিচালনা করার চেষ্টা করছেন। ফলে ক্ষমতাসীন সরকারগুলো কাঙ্খিত সফলতা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন। যা বর্তমান সরকারের মধ্যেও বিদ্যমান রয়েছে। জাতীয় অনেক বিষষে একমত হতে না পারলেও অপরিহার্য কিছু বিষয়ে অবশ্যই ঐক্যমতে পৌঁছা জরুরী বলে রাষ্ট্র বিজ্ঞানীরা মনে করেন। তাই সকল রাজনৈতিক দল ও সূধী সমাজকে এবিষষে এখনই ভাবা উচিত। আমরা চাই আগামি দিনগুলো আমাদের এই পিছিয়ে পড়ার কারনগুলো যেন আর না ঘটে এমনভাবে আমরা কাজ করে যাবো। এক্ষেত্রে বর্তমানে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সরকারের দায়িত্ব অনেক বেশি।
তাদেরকেই এমন পথে সামনে এগিয়ে যাওয়ার রাস্তা দেখিয়ে যেতে হবে। আর তা হলে জাতি তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে সক্ষম হবে। আমরা এই উদ্যোগ বর্তমান সরকারের নিকট থেকে আশা করি।

করোনার কারনে দেশে বন্ধ থাকা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো  আগামি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে পর্যায়ক্রমে খুলে দেয়ার একটি রোড়ম্যাপ সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেছেন। দেশব্যাপী গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে অদ্যাবধি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ রয়েছে। শিক্ষা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংস্থা গণস্বাক্ষরতা অভিযানের এক সমীক্ষায় দেখা যায় বর্তমানে দেশের ৭৫ ভাগ শিক্ষার্থী ক্লাশে ফিরতে চায়। ৭৬ শতাংশ অভিভাবক ও ৭৩ শতাংশ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পক্ষে। তবে ৫৮ শতাংশ শিক্ষক ও ৫২ শতাংশ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সতর্কতার সাথে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পক্ষে। গণস্বাক্ষরতা অভিযানের ‘এডুকেশন ওয়াচ ২০২০-২১ সমীক্ষার অন্তর্বতীকালীন প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গত ২৪ জানুয়ারি দুপুরে এক ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়। এই গবেষণা তথ্য তুলে ধরেন গবেষক ড. মোস্তাফিজুর রহমান।

এই গবেষণায় আরো দেখা গেছে এসময় সংসদ টিভি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, রেডিও ও মোবাইলে ৩১.৫ শতাংশ ক্লাসে অংশ গ্রহন করে। ৬৯.৫ শতাংশ অংশ নেয়নি। যেসব শিক্ষার্থী দূরশিক্ষণ প্রক্রিয়ার বাইরে রয়েছে, তাদের মধ্যে ৫৭. ৯ শতাংশ ডিভাইসের অভাবে অংশ নিতে পারেনি। আর গ্রামীণ এলাকায় এই হার ৬৮. ৯ শতাংশ। তাছাড়া অনলাইন ক্লাস আকর্ষণীয় না হওয়ায় ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অংশ নেয়নি। ৯৯.৩ শতাংশ বাড়িতে নিজে নিজে পড়ালেখা করেছে। একটি জাতী ও প্রজন্মকে এভাবে থামিয়ে রাখা হলে তা দেশের ক্ষতি ছাড়া উপকার বয়ে আনবে কিনা তা ভালো করে চিন্তায় নেয়া উচিত। তাই অতিমারী করোনার টিকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার পথ সুগম করে দেয়ার পক্ষে সকলের উচিত জনমত তৈরি করা। যা শুধু উত্তমই নয় বড় আরাধ্য। সকল অংশীজন আর বিলম্ব না করে এবিষয়ে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে জাতীকে সামনে এগিয়ে নিতে কাজ করা হবে অনেক বেশি বিজ্ঞতার ও বুদ্ধিমানের। আমরা এমন একটি দৃশ্য দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।

লেখক : মোঃ রুহুল আমিন, সাংবাদিক ও শিক্ষক
ই-মেইল – aminruhul8660@gmail.com

Comments are closed.

More News Of This Category