কিছু কিছু আলেম (!) ভাস্কর্যকে মূর্তির সাথে তুলনা তথা একাকার করে বক্তৃতা বিবৃতি দিচ্ছেন। বিষয়টি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
ভাস্কর্য আধুনিক জ্ঞান -বিজ্ঞান, শিল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। একটি জাতির ইতিহাস, ঐতিহ্য, গৌরব, অহংকার, ত্যাগের মহিমা ধারণ করে ভাস্কর্য। ভাস্কর্য নান্দনিকতা ও সৌন্দর্যের প্রতীক।
প্রক্ষান্তরে মূর্তি উপাসনার প্রতীক। অনেক ধর্মের মানুষ মূর্তিপূজা করে। মূর্তি তৈরীই হয় পূজার উদ্দেশ্যে।
এখানে উদ্দেশ্যগত ভিন্নতা আছে। ভাস্কর্য পূজার উদ্দেশ্যে তৈরী হয় না। অন্য ধর্মাবলম্বীরা মূর্তিপূজা করলেও আমাদের পবিত্র ইসলাম মূর্তিপূজার ঘোর বিরোধী।
যেহেতু ভাস্কর্য পূজার নিমিত্তে তৈরী হয় না তাই এর বিরুদ্ধে কারও কোন আক্রোশ থাকতে পারে না।
হাদিসগ্রন্থ বোখারী শরীফের প্রথমেই আছে ,
” ইন্নামাল আমালু বিন্নিয়্যাত ”
নিয়তের উপর কাজ নির্ভরশীল। অর্থাৎ উদ্দেশ্যই হচ্ছে মূল বিষয়। যেটি যে উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়, সেটিকে সেভাবে বিবেচনা করতে হবে।
যে বা যারা ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে, তারাও এই সত্য বুঝে। তারপরও তাদের ভাস্কর্য বিরোধী এই হেন বক্তব্য বা আস্ফালন কেন ?
বিষয়টি অতি পরিস্কার। পরাজিত পাকিস্তান প্রেমিক
( ধর্ম প্রেমিক নয়) এবং তাদের প্রেতাত্মারাই মূলতঃ ধর্মকে ব্যবহার করে ভাস্কর্য বিরোধী অবস্থান নিয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে ঢাকার ধোলাইরপাড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের সরকারি ঘোষণার পরই মৌলবাদী ওই গোষ্ঠীর গাত্রদাহ শুরু হয়। চিরাচরিত ভাবেই এরা ধর্মের দোহাই দিয়ে সত্য-সুন্দর-ন্যায়ের বিরুদ্ধে মতলববাজী ফতোয়া দেয়া শুরু করে।
অথচ সারা দেশে জিয়াউর রহমানের ছড়িয়ে থাকা ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে এদের কোন আপত্তি নেই। হাটহাজারীর কাছে খাগড়াছড়ি শহরের দ্বারপ্রান্তে জিয়াউর রহমানের বৃহদাকার ভাস্কর্য রয়েছে —- এ বিষয়ে এরা নীরব ?
মুসলিম বিশ্বের অনেক দেশেই ভাস্কর্য আছে। তুরস্কে কামাল আতাতুর্ক, পাকিস্তানে জিন্নাহ, ইরানে কবি-দার্শনিক রুমী ও ফেরদৌসীর ভাস্কর্য রয়েছে। ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, মিশর প্রভৃতি মুসলিম দেশেও অসংখ্য ভাস্কর্য রয়েছে। স্ব স্ব জাতি তাদের ইতিহাস -ঐতিহ্য, অর্জিত গৌরবের প্রতীক হিসেবে এসব ভাস্কর্য নির্মাণ করেছে। ওখানকার আলেমগণ ভাস্কর্যের বিরোধিতা করেন না। এমনকি আমাদের দেশের এই চিহ্নিত ধর্মব্যবসায়ীরাও ওইসব দেশের ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে না।
” শস্যের চেয়ে টুপি বেশি
ধর্মের চেয়ে আগাছা বেশি। ”
লালসালু উপন্যাসে সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ স্যার উপরোক্ত মন্তব্যটি এই ধর্মব্যবসায়ীদের ক্রিয়াকর্ম দেখেই করেছিলেন।
যারা আধুনিক বিশ্বের শিক্ষা-শিল্পকলা সম্পর্কে অজ্ঞান তাদের ব্যবহার করেই এই ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। অশিক্ষা, কুশিক্ষা, কুসংস্কার, ধর্মান্ধতাকে পূঁজি করেই এই দেশ বিরোধী শক্তি তাদের খিস্তিখেউড় চালিয়ে যাচ্ছে।
এরা চোর-ডাকাত, লুটেরা, দূর্বৃত্ত ইত্যাকার অপশক্তির বিরুদ্ধে টু শব্দটি পর্যন্ত করে না।
মানুষের অজ্ঞানতাকে কাজে লাগিয়ে যারা ধর্মের অপব্যবহার করে দেশে অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।
মায়ের অশ্রুজল, বোনের হাহাকার, লাখো শহীদের রক্তস্নাত এই বাংলায় মৌলবাদীদের এই আস্ফালন চলতে দেয়া যাবে না।
ইসলামী ফাউন্ডেশন তথা সরকারকে নির্লিপ্ততা ভেঙে এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুবা এরা সোনার বাংলার অগ্রগতিকে পিছিয়ে দিবে ;
যা তারা করেছে যুগে যুগে, কালে কালে ।
সূত্র :লেখকের ফেসবুক পাতা থেকে।