বিশেষ প্রতিনিধি
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ ভূমি অফিসের নাজির ইব্রাহিম খলিলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগে ফরিদগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে।পূর্ব শত্রুতার জের ধরে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগে প্রকাশ।এছাড়া, সৎ ভাইয়ের ঘরের সামনে ইটের স্তুপ রেখে ভাইয়ের পরিবার সদস্যদের চলাচলের পথ বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
১ মার্চ বিজ্ঞ আদালতের আদেশে ২ মার্চ ফরিদগঞ্জ থানায় ওই সংক্রান্ত মামলা রুজু করা হয়েছে বলে জানা যায়।নাজির ইব্রাহিম খলিল এখন ঐ মামলায় জামিনে এসে অফিস করছেন।
ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৫নং গুপ্টি (পূর্ব) ইউনিয়নের নারিকেলতলা নোয়া বাড়ির ভূক্তভোগী মোঃ সেলিম খান (৫৮) অভিযোগ করেছেন, সন্ত্রাসী হামলার ঘটনাটি ঘটেছে ১৯-এ নভেম্বর ২০২১ তারিখে ৮নং পাইকপাড়া ইউনিয়নের আনন্দবাজারের উত্তর দিকে। বাজার অভিমুখে যাওয়ার পথে সেলিম খান ও তার আত্মীয়ের ওপর হামলা করেন ইব্রাহীম খলিল বাবু (৪২) ও তার সহযোগিরা। এতে, সেলিম খানের আত্মীয় আবদুল কাদের (৩২) গুরুতর আহত হন। তার ডান হাতের কব্জির হাড় ভেঙ্গে যায়, মুখে ও ঘাড়ে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হন। এ ঘটনায়, সেলিম খান বাদী হয়ে চারজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পেনাল কোড ১৮৬০ এর ১৪৮, ৩২৩, ৩২৬, ৩০৭, ৫০৬(২), ১০৯ ধারায় ‘মোকাম বিজ্ঞ আমলী আদালত ফরিদগঞ্জ, ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-০১, চাঁদপুর’-এ একটি অভিযোগ (নং সি আর ১০৯/২২, ফরিদগঞ্জ) দায়ের করেন।
এতে, পর্যালোচনা করে অভিযোগটি ফরিদগঞ্জ থানায় এফ.আই.আর ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অফিসার ইনচার্জকে বিজ্ঞ বিচারক আদেশ প্রদান করেন (স্মারক নং ৬১, তারিখ: ০১-০৩-২০২২ খ্রিঃ)। পরদিন ফরিদগঞ্জ থানায় নিয়মিত মামলা রুজু (নং ৫, তারিখ: ০২-০৩-২০২২ খ্রিঃ) করা হয়।
জানা গেছে, অভিযুক্ত ইব্রাহীম খলিল বাবু দীর্ঘদিন যাবত ভাই সেলিম খানের সঙ্গে জমিজমা নিয়ে বিরোধ করে আসছেন। এর এক পর্যায়ে ১০ই নভেম্বর ২০২১ তারিখে দুই পক্ষের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হয়। এতে সেলিম খান ও তার পরিবার সদস্যদের মারধেের শিকার হয়ে ফরিদগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করতে যান। থানা থেকে বাড়িতে ফেরার পথে আনন্দবাজারের পাশে ইব্রাহিম খলিল বাবুর হুকুমে ও নেতৃত্বে সেলিম খানের পরিবার সদস্যদের ওপর হামলা করা হয়। ওই হামলায় সেলিম খানের স্ত্রী সুফিয়া বেগম (৫৪), ছেলে রহমান উল্লা (৩২), পুত্রবধু তাসলিমা (২৮), আত্মীয় আবদুল কাদের (৩২)সহ অন্তত সাতজন আহত হন। তারা চাঁদপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।
এছাড়াও দুটি সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ভাংচুর ও চালককেও মারধর করা হয়েছে। ওই হামলার পর এলাকায় ঘটনার মিমাংসা করে দেয়া হবে বলে নানানপক্ষ আশ্বাস দিতে থাকেন। এতে, কালক্ষেপণই করা হয়, এলাকায় ঘটনার মিমাংসা হয়নি। সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা তামাদি হয়ে গেছে ভেবে ইব্রাহিম খলিল বাবু বাড়িতে পুনরায় দ্বন্দ্বের সূচনা করেন। তিনি প্রায় দুমাস পূর্বে সেলিম খান ও পরিবার সদস্যদের চলাচলের পথে কয়েক হাজার ইট স্তুপ করেন। চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে গেলে সেলিম খান নানানজনের কাছে ধর্ণা দেন। সবাই আশ্বাস প্রদান করলেও রহস্যজনক কারণে কোনো সুরাহা হয়নি। অবশেষে, বিচারের আশায় সেলিম খান ১লা মার্চ বিজ্ঞ আদালতের দ্বারস্থ হন। এদিকে, আদালতে দায়েরকৃত অপর অভিযুক্তরা হলেন সেকান্তর আলীর ছেলে দুলাল মিয়া, ইব্রাহিম খলিল বাবুর ছেলে ইসমাইল হোসেন জয়, স্থানীয় সাইসাঙ্গা গ্রামের মোঃ হারুন এর ছেলে আলোচিত ধর্ষণে অভিযুক্ত সিমুল (২১)সহ অজ্ঞাত ৪/৫ জন। অভিযোগ পর্যালোচনা করে বিজ্ঞ বিচারক শুধু মাত্র ইব্রাহিম খলিলের বিরুদ্ধে ফরিদগঞ্জ থানায় এফ.আই.আর. দায়ের ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জকে আদেশ দেন।
এ ব্যপারে সেলিম খান বলেন, ইটা রাখতে নিষেধ করা সত্ত্বেও তিনি ও তার পরিবার সদস্যরা মানেননি। বরং আমাদের লাঠিসোটা নিয়ে মারার জন্য উদ্যতসহ গালাগাল করেছেন, হুমকি ধমকি দিয়েছেন। আমাদের শারিরীক, মানসিক ও সামাজিকভাবে ক্ষতি ও হেয় প্রতিপন্ন করার মানসে পরিকল্পিতভাবে এহেন কাজ করছেন। সামনে বর্ষা মৌসুমে আরও দুর্ভোগের মধ্যে পড়বো। ইটা রাখারস্থল (ভূমি) ইজমালি সম্পত্তি। ওই ইটা রাখার পর্যাপ্ত ও কয়েকগুন বেশি জায়গা আশেপাশে রয়েছে। ভূমি অফিসে চাকরির সুবাদে এলাকায় বিশেষ পাওয়ার খাটান তিনি।
এ ব্যপারে মুঠোফোন কথা হয় অভিযুক্ত ইব্রাহিম খলিলের সঙ্গে। তিনি বলেন,
আমার পিতা মোহাম্মদ আলীর আমিই একমাত্র সন্তান।আমার মাতা হনুফা বেগমকে যখন আমার পিতা বিয়ে করেন তখন আমার মায়ের আগের সংসারের (মায়ের আগের স্বামী আঃ আজিজ)দুই ছেলে সেলিম খান রহিম খান ও দুই মেয়ে মঞ্জুমা খাতুন ও জাহানারা ছিলেন।আমার মা হনুফা বেগম তাঁর পিতার ওয়ারিশসূত্রে মোট ৫২ শতাংশ ভুমির মালিক হন।ওই সম্পত্তি থেকে আমার মা ২১শতাংশ সম্পত্তি বিক্রি করেন। বাকি ২৩ শতাংশ ভূমি থেকে আমার মা হনুফা তাঁর আগের সংসারের দুই কন্যা জাহানারা ও মঞ্জুমা খাতুনকে ৮শতাংশ জমি ১৯১ নং দলিলে হেবা করে দেন। বাদ বক্রি ১৫ শতাংশ জমি আগের স্বামী এবং দুই ছেলেকে হেবা করে দেন।পরবর্তীতে জাহানারা ও মঞ্জুমা তাদের ৮শতাংশ ভুমি আমার বাবা মোহাম্মদ আলীর কাছে বিক্রি করেন।আমার পিতার মৃত্যুর পর এককভাবে আমি ইব্রাহিম খলিল সে সম্পত্তির মালিক হই।ঐ সম্পত্তি দখল করতে গেলেই ওরা আমার ও আমার পরিবারের উপর হামলা করে।এরই প্রেক্ষিতে অতিরিক্ত জেলা মেজিস্ট্রেট কোর্ট চাঁদপুর এ ১৪৫ ধারায় মামলা দায়ের করি যার নং ১১৩/২২।প্রতিপক্ষ যখন বুঝতে পারে এই সম্পত্তি কখনো ওরা পাবে না তখনই আমার বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করা শুরু করে। বোনের কাছ থেকে আমার খরিদকৃত সম্পত্তিতে ইট রেখেছি।
ওই জায়গা ইজমালি, তার জন্য বন্টননামা দলিল প্রয়োজন হবে, তা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে ইব্রাহিম খলিল বলেন, হ্যাঁ, হয়েছে। এ বিষয়ে সেলিম খান বলেন, তিনি সত্য বলেননি। একই দাগে দালিলিকভাবে আমিও মালিক।
এ বিষয়ে যোগাযোগ এর জন্য উপজেলা ভূমি কর্মকর্তা (এসি ল্যান্ড) হাজিগঞ্জ এর মুঠোফোনে কল দিলে বন্ধ পাওয়া যায়।মঙলবার, হাজীগঞ্জ উপজেলা ভুমি অফিসে গিয়ে দেখা যায় ইব্রাহিম খলিল অফিসে রয়েছে।
ফরিদগঞ্জ থানার সেকেন্ড অফিসার ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস.আই. জামাল বলেছেন, আদালতের আদেশে অভিযুক্ত ইব্রাহিম খলিল বাবুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে, তদন্ত চলছে। বিধান মোতাবেক ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা, জেলা প্রশাসক কার্যালয়- চাঁদপুর, হাজীগঞ্জ এর ইউ.এন.ও, এ.সি. (ল্যান্ড) ও সংশ্লিষ্ট ভূমি শাখায় মামলার চিঠি দিয়েছি।
এ ব্যপারে, জানতে চাইলে ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিউলী হরি বলেন, সরকারী কর্মচারীর বিরুদ্ধে ফৌজদারী অভিযোগে মামলা হলে ক্ষেত্র বিশেষে অভিযুক্ত ব্যক্তি সাময়িক বরখাস্ত থাকেন। মামলা থেকে অব্যাহতি পেলে চাকরিতে পুনর্বহাল হবেন।