রবিবার, ১৩ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডিজিটাল বাংলাদেশকে দেখল বিশ্ববাসী

মোস্তাফা জব্বার 


এক সময়ে দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াতে বা পর্যটক হিসেবে নিজেকে ভাবতে দারুণ লাগতো। ভ্রমণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম বিধায় সুযোগটাও ছিল ব্যাপক। প্রায় সব এয়ারলাইন্স থেকেই ফ্রি টিকিট পেতাম। হোটেলে পেতাম ডিসকাউন্ট। তবে মন্ত্রীর দায়িত্ব পাবার পর ১৮ সালে প্রথমবার বার্সিলোনা সফর করে জিএসএমএ-এর প্রতি এক ধরনের তীব্র আকর্ষণ অনুভব করি। তাই ১৯ সালেও বার্সিলোনায় যাবার ব্যাপারে কোন প্রশ্নই ওঠেনি। বিশেষ করে ১৮ সালে বার্সিলোনায় আমরা যে অসাধারণ জ্ঞান অর্জন করেছিলাম তার প্রেক্ষিতে ১৯ সালের সফরটার গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। আমার আগ্রহটার অন্যতম কারণ ছিলো ৫জির সর্বশেষ অবস্থাটি জানার ব্যাপারে। সেই অভিজ্ঞতা থেকে এটি নির্দিধায় বলতে পারি যে ২০ সালের অভিজ্ঞতা আরও চমৎকার হবে। আশা করছি এবারও মেলায় যাব।

গত ২৫-২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ খ্রি. তারিখে GSMA Ministerial Programme & Mobile World Congress-2019 স্পেনের বার্সেলোনায় অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত প্রোগ্রামে আমার নেতৃত্বে ডাক ও টেলিযোগাযোগ, বিটিআরসি, টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর, টেলিটক ও ইন্ডাস্ট্রির প্রতিনিধিসহ ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ টেলিকম ও তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত এ সম্মেলনে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীবর্গ, নিয়ন্ত্রকগণ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীসহ ৭৯০০ জন উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। Mobile World Congress এর প্রদর্শনীতে বিশ্বের টেক জায়ান্টগণসহ ২৪০০ এর অধিক প্রতিষ্ঠান তাদের প্যাভিলিয়ন স্থাপন করেন এবং ১৯৮টি রাষ্ট্রের এক লাখের অধিক দর্শনার্থী বর্ণিত প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও চার দিনব্যাপী বৈশ্বিক এ সম্মেলনে বিভিন্ন থিমেটিক সেশন, সেমিনার, ওয়ার্কসপ ও মিনিস্ট্রিরিয়াল প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়।

সফরকালে প্রতিনিধিদল আয়োজক সংস্থা জিএসএমএ, ফেসবুক, আইক্যান ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সভায় মিলিত হয়। এছাড়াও টেক জায়েন্ট নকিয়া, এরিকসন, হুয়াওয়ে টেকনোলজিস, জেডটিই করপোরেশন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের প্যাভিলিয়ন পরিদর্শনসহ উক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগণের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সভা করি। প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তথা টেলিনর গ্রুপ, অ্যাক্সিয়াটা গ্রুপ, ভিয়ন, তেজাস কর্পোরেশন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীগণের সঙ্গে বাংলাদেশে বিনিয়োগের অবস্থা, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

শিল্পযুগের সূচনা ও নগরায়ণ দুটিই যখন ইউরোপের একচেটিয়া বিষয় সেহেতু আমাদের মতো দেশ থেকে ইউরোপে গেলে চোখ কপালে ওঠবে সেটাই স্বাভাবিক। আমাদের নগরায়ণের পরও আমরা তাদের নগর জীবনে চলতে দেখলে মুগ্ধ হয়ে যাই। বহুদিন পরে আবার ইউরোপ যাবার ফলে চমকিত না হলেও মুগ্ধতা কাজ করেছে। তবে সেই মুগ্ধতা যতোটা তাদের নগরী বা নাগরিক বা প্রকৃতি দেখে তার চাইতে বহুগুণ বেশি বিশ্ব মোবাইল কংগ্রেসের প্রযুক্তির জন্য।

স্পেনের বার্সেলোনায় ইতিহাসে এ প্রথম বাংলাদেশের কোনো প্রতিনিধি হিসেবে কী-নোট উপস্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে এক অভাবনীয় অগ্রগতির বাংলাদেশকে বৈশি^ক সম্মেলনে উপস্থাপন করার মাহেন্দ্রক্ষণটি স্মৃতিতে চির জাগরূক হয়ে থাকবে। জাতির পিতা যে দেশটি দিয়ে গেছেন তার কন্যার হাতে সেই দেশটি কীভাবে সমৃদ্ধির শিখরে উঠছে বৈশি^ক হাই প্রোফাইল সম্মেলনে উপস্থিত ডিজিটাল দুনিয়ার শীর্ষ নেতৃত্বের সামনে সম্মেলন কেন্দ্রটি ছিল সেদিন বাংলাদেশময়। মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসের এই সেশনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীবর্গ, রেগুলেটরগণ, টেকনোলজি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

মোবাইল অবকাঠামো : “ইজ ইউর পলিসি ফিট ফর পারপাস?” শিরোনামের মূল প্রবন্ধে ডিজিটাল বাংলাদেশের এজেন্ডা বা ভিশন এবং পলিসির দিক হতে বাংলাদেশের আগামী ২০২১, ২০৩০, ২০৪১, ২০৭১ এবং ২১০০ সালের জন্য গৃহীত লক্ষ্য মাত্রা আমি তুলে ধরি। বাংলাদেশের ইনফ্রাস্ট্রাকচার, টেলিকমিউনিকেশনের উন্নয়ন, সফটওয়্যার সক্ষমতা ও ডিজিটাল সংযোগের ক্ষেত্রে কী ধরনের র্কাযক্রম গ্রহণ করা হয়েছে সে সম্পর্কে পরিষ্কার একটা ধারণা আমার উপস্থাপনায় উঠে আসে। আমার উপস্থাপিত মূলপ্রবন্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও প্রজ্ঞাবান নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার চিত্র, বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ খাতে উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি, অবকাঠামোর অবস্থা, বিনিয়োগ পরিবেশ, জিডিপি প্রবৃদ্ধি তুলে ধরা হয়। এছাড়াও টেলিযোগাযোগ খাতের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও মূল প্রবন্ধে উপস্থাপন করি। পরামর্শ দিয়েছি যে, বিশ্বের সব দেশ একই রকমভাবে নতুন প্রযুক্তি প্রচলন করতে পারবে না। প্রত্যেক দেশের সমস্যা এবং সম্ভাবনা ভিন্নরকম হওয়ায় সেদেশের পরিকল্পনাও ভিন্ন হবে। এছাড়া হোয়াটস নেক্সট? বাংলাদেশের ৫এ পরিকল্পনা এবং জন্য কি ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে তা বিস্তারিত মূলপ্রবন্ধে তুলে ধরি।

বাংলাদেশ প্রযুক্তিকে কীভাবে পলিসি ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে এনে তা ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে ধাবিত করেছে, তার বিস্তারিত বিশ্ব কংগ্রেসের সামনে বর্ণনা করি। উল্লেখ করেছি, বাংলাদেশের তৃণমূল পর্যায়ে মানুষের কাছে তথ্যপ্রযুক্তি কীভাবে পৌঁছে গেছে, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ে ফাইবার কানেক্টিভিটির মাধ্যমে প্রযুক্তির দুয়ার খুলে দেওয়ার গৃহীত কর্মসূচি।

ডিজিটাল বাংলাদেশের অভাবনীয় অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপনার পর উপস্থিত অনেকে তাৎক্ষণিক উচ্ছ্বসিত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তাদের মনে হয়েছে বাংলাদেশ সাউথ এশিয়ার মধ্যে একটি ইমার্জিং কান্ট্রি যারা লংটার্ম প্ল্যান বা পরিকল্পনা করে কাজ করছে, যা উপস্থিত সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমার বক্তব্যে বাংলাদেশের ইনফ্রাস্ট্রাকচার ও উন্নয়নের যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে তা অনেকেরই জানা ছিল না। এতে বাংলাদেশের সম্ভাবনার সঙ্গে ভাবমূর্তির বিষয়টি উজ্জ্বলভাবে ফুটে উঠেছে। এছাড়াও আমার উপস্থাপনায় বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা, দেশের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি, এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মিশন, ভিশন এবং গতিশীল নেতৃত্বে বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের অভাবনীয় অগ্রগতি তুলে ধরা হয়।

জিএসএমএ-এর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সভা : স্পেনের বার্সেলোনায় মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসের আয়োজক সংস্থা জিএসএমএর সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বাংলাদেশে ৫জি বাস্তবায়নে করণীয় নিয়ে বাংলাদেশকে পরিকল্পনা প্রণয়নে মোবাইল যোগাযোগ শিল্পের বৈশ্বিক সংগঠন জিএসএমএ সহযোগিতা করবে মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

জিএসএমএ-এর এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তাগণের সঙ্গে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আমি বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব প্রদান করি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হকসহ প্রতিনিধিদলের অন্যান্য সদস্যগণ। জিএসএমএর পক্ষে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের হেড অব পলিসি ইমানুয়েলা লিচ্চি আলোচনায় নেতৃত্ব দেন। বৈঠকে ২০২১ হতে ২০২৩-এর মধ্যে দেশে ৫জি চালু করতে সব রকম প্রস্তুতির বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এই জন্য প্রযুক্তিগত সক্ষমতা তৈরি কৌশলগত পরিকল্পনায় পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর আমি বিশেষ গুরুত্বারোপ করি। ৫জি এর জন্য ইকোসিস্টেম তৈরিতে মোবাইল যোগাযোগ ও প্রকৌশল খাতসংশ্লিষ্ট সবাইকে বাংলাদেশে স্বাগত জানিয়ে বলেছি, বাংলাদেশে ৫জি চালুর বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এবারের মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে আমি অংশগ্রহণ করেছি। আমার এমন আগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে জিএসএমএ-এর প্রতিনিধিগণ বাংলাদেশের ৫জি চালুর বিষয়ে একটি পরিকল্পনা প্রণয়নপূর্বক যথা শিগগির সম্ভব প্রতিনিধি প্রেরণ করবেন মর্মে আশ্বাস প্রদান করেন। বৈঠকে আমার সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে বিটিআরসি’র কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ইউনিফাইড লাইসেন্সিং, ফাইভ জি স্পেকট্রাম, এনইআইআর ও বাংলাদেশের টেলিকমিউনিকেশন পলিসি ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়।

আইকান-এর সঙ্গে সভা : স্পেনের বার্সেলোনায় মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেসে বাংলাদেশের বিভিন্ন দাবির বিষয়ে তথা বাংলা ভাষার জাতীয় স্ট্যান্ডার্ড মানা নিয়ে আইক্যানের পূর্ণ সমর্থন পেয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক ডোমেইন ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইক্যানের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাগণের সঙ্গে আমার নেতৃত্বে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে আমি আইক্যানের কাছে ইউনিকোডে বাংলা ভাষার সমস্যাগুলো তুলে ধরি এবং এগুলো সমাধানে সহযোগিতা প্রদানের জন্য তাদের আহ্বান জানিয়েছি। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন আইক্যানের প্র্রেসিডেন্ট ও সিইও গোরান মারবাই এবং চিফ টেকনিক্যাল অফিসার ডেভিড কনার্ডসহ শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধিরা। বাংলাদেশের দলে ছিলেন বিটিআরসি’র চেয়ারম্যানসহ এমডব্লিউসি সফরে সরকারি প্রতিনিধিদলে যুক্ত সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাগণ। বৈঠকে আইক্যান বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের মতের সঙ্গে একমত পোষণ করে। আইক্যানের প্রেসিডেন্ট জানান যে, সবার উচিত জাতীয় মান অনুসরণ করা। বৈঠকে ইউনিকোডে বাংলার কী দাবি আর কী সমস্যা আমি তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করি। বাংলা ডোমেইন নাম ও ইউনিকোডের যুক্তাক্ষর লেখার সমস্যা সমাধানে আইক্যানকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধ জানানো হয়। আমি স্পষ্ট করে জানাই যে, বস্তুতপক্ষে বাংলা লিখায় দু-তিনটি ইস্যুতে ইউনিকোডের সঙ্গে সমস্যা রয়েছে। সমস্যাগুলো দীর্ঘদিন যাবৎ উপেক্ষিত ছিল। ফলে বৈঠকটি দেশের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠে। আইক্যান কর্তৃপক্ষ দ্রুত সমস্যাসমূহ সমাধানে আশ্বাস প্রদান করেছে।

ফেসবুকের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সভা : স্পেনের বার্সেলোনায় মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস এ ফেসবুকের প্যাভিলিয়নে উক্ত প্রতিষ্ঠানের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিগণের সঙ্গে আমার নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে ফেসবুককে বাংলাদেশের আইন এবং নিয়মনীতি অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ সময় সম্প্রতি জাতীয় সংসদে পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কপি ফেসবুক প্রতিনিধিদলের নিকট প্রদান করা হয়। আমি ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশের আইন, সংস্কৃতি ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা মেনে নিরাপদ ইন্টারনেট ব্যবহারে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলে জানিয়েছি। এছাড়াও ফেসবুককে সঠিকভাবে বাংলা ভাষায় অনুবাদ এবং তা প্রয়োগের আহ্বান জানিয়েছি। বৈঠকে আমি ফেসবুককে সঠিকভাবে বাংলা ভাষা প্রয়োগের সক্ষমতা অর্জন করার ক্ষেত্রে আমার মন্ত্রণালয় হতে সব রকম সহযোগিতা করার প্রস্তাব দিয়েছি। আমার প্রস্তাবে অনুবাদসহ বাংলা ভাষার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হবে বলে জানান ফেসবুকের গ্লোবাল পলিসি সলিউশনের ভাইস- প্রেসিডেন্ট রিচার্ড অ্যালান। এছাড়াও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন বলে আমাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন ফেসবুকের সাউথ এশিয়া রিজিওনের হেড অব পলিসি অশ্বিনি রানা, বিটিআরসির চেয়ারম্যান জনাব মো. জহুরুল হকসহ মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি ও ডটের কর্মকর্তাগণ।

ফেসবুক প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশে অফিস স্থাপনের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। এছাড়াও বাংলাদেশের জন্য সার্বক্ষণিক পয়েন্ট অব কন্টাক্ট বা ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়। প্রায় ১ ঘণ্টাব্যাপী এ বৈঠকে আমি বাংলাদেশে ফেসবুকের অফিস খোলার বিষয়টির সঙ্গে ফেসবুক কর্তৃক রেসপন্স টাইমের বিষয়ে জোর দিয়েছি। রেসপন্স টাইমের বিষয়ে ফেসবুক যে দীর্ঘসূত্রতা নেয় সেটিকে অতিদ্রুত রেসপন্স টাইমে আনার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়। আমি তাদের স্পষ্ট জানিয়েছি সরকার কখনও ইন্টারনেট বন্ধ করতে চায় না। আমার অনুরোধের প্রেক্ষিতে ফেসবুক হতে বাংলাদেশে অদূর ভবিষ্যতে অফিস স্থাপনের বিষয়ে নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়। এছাড়াও ইমিডিয়েট রেসপন্স টাইম এর বিষয়ে ফেসবুক দপ্তরে বাংলাদেশ ডেস্ক স্থাপন তথা ডেডিকেটেড/সার্বক্ষণিক কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হবে মর্মে নিশ্চিত করা হয়। এছাড়াও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের আইন, সংস্কৃতি, করনীতি ইত্যাদি মেনে চলার আশ্বাস প্রদান করেন।

(মতামত লেখকের নিজস্ব)

ঢাকা, ২৩ জানুয়ারি, ২০২০

[লেখক : তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাসের চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যারের জনক]

mustafajabbar@gmail.com

Comments are closed.

More News Of This Category