শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শুভ নববর্ষ ১৪২৬ বঙ্গাব্দ

 

এসো হে বৈশাখ, এসো এসো- বৈশাখ তথা নতুনকে, নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার এই যে আকুতি, এটা চিরন্তন ও সর্বজনীন। তাইতো বাংলা নববর্ষে জেগে ওঠে প্রতিটি বাঙালি প্রাণ। মঙ্গলের প্রত্যাশায়, কল্যাণের প্রত্যাশায়, শান্তি, সমৃদ্ধি ও ভালোবাসার প্রত্যাশায় পহেলা বৈশাখের প্রত্যুষে প্রতিটি বাঙালির কণ্ঠ থেকে নিঃসৃত হয় সেই উজ্জীবিত আবাহন, এসো হে বৈশাখ। যা কিছু জীর্ণ, পুরাতন, অকল্যাণকর- সব কিছু সুদূরে মিলিয়ে যাক, আর প্রাণের বন্যায় আনন্দের ডালি সাজিয়ে আসুক নতুন বছর। আজ সেই পহেলা বৈশাখ, ১৪২৬ বাংলা সনের প্রথম দিন। আজ উৎসবে, আয়োজনে নতুন বছরকে বরণ করে নেবে বাঙালি জাতি। বাংলা নববর্ষকে বরণ করে নেওয়ার এই যে উৎসব তা আজ বাঙালির প্রাণের উৎসবে পরিণত হয়েছে। বাঙালির সংস্কৃতির এক প্রধান ধারকে পরিণত হয়েছে। নানা আয়োজনে যেমন দেশজুড়ে বরণ করে নেওয়া হবে নতুন বছরকে, তেমনি পৃথিবীর যেখানেই বাঙালির বসবাস রয়েছে সেখানেই দৃশ্যমান হবে এই উৎসব। প্রকাশ ঘটবে নিজের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি এক অকৃত্রিম ভালোবাসার।

প্রতিবছরের মতো রাজধানী ঢাকায় আজকের দিনটি শুরু হবে রমনায় ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। এই অনুষ্ঠানও এখন বাঙালির এক অমলিন ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। পাকিস্তানি শাসনামলে সংস্কৃতিবিদ্বেষ থেকে নববর্ষ উদ্যাপনকে বাধাগ্রস্ত করার নানা অপচেষ্টা করা হয়েছিল। এরই প্রতিবাদে ১৯৬৭ সালে ছায়ানট রমনার বটমূলে বর্ষবরণ উৎসবের আয়োজন করেছিল। পাকিস্তানি শাসকদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে হাজার হাজার বাঙালি যোগ দিয়েছিল সেই উৎসবে। সেই থেকে নববর্ষের প্রথম প্রভাতে রমনার বটমূলে ছায়ানটের এই অনুষ্ঠান চলে আসছে। বাঙালির সংস্কৃতিপ্রেমের এক প্রতীকে পরিণত হয়েছে। এই প্রতীক পাকিস্তানি শাসকদের যেমন চক্ষুঃশূল ছিল, তেমনি স্বাধীনতা-উত্তরকালে এ দেশে থাকা পাকিস্তানি ভাবধারার কিছু মানুষেরও চক্ষুঃশূল হিসেবেই রয়ে গেছে। আর তাই রমনার এই সমাবেশে অন্ধকারের শক্তিগুলো বোমা হামলা চালায়, এর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে। কিন্তু সংস্কৃতির স্রোত, ঐতিহ্যের আকর্ষণ কখনো থেমে থাকে না। আজও রমনায় ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে মানুষের ঢল নামবে। চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রায় যোগ দেবে লাখো বাঙালি। শুধু রমনা বা চারুকলা নয়, রাজধানীজুড়েই আজ থাকবে উৎসবের আমেজ। ধানমণ্ডি লেক বা রবীন্দ্রসরোবরসহ রাজধানী ঢাকার আনাচকানাচে নববর্ষ উদ্যাপনের অসংখ্য আয়োজন চোখে পড়ে। রাজধানীর বাইরেও প্রতিটি শহরে, এমনকি গ্রামাঞ্চলেও থাকবে বর্ষবরণের নানা আয়োজন। গ্রামাঞ্চলের হাট-বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বসবে চৈত্রসংক্রান্তি ও বর্ষবরণের মেলা। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে উদ্যাপন করা হবে হালখাতা উৎসব।

আজকের এই বিশেষ দিনে সবারই চাওয়া -মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা। নববর্ষে আমাদের অগণিত পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ীকে জানাই নতুন বছরের শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ।

Comments are closed.

More News Of This Category