শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সহজ হচ্ছে আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়া : ২১ ধরনের ডকুমেন্ট থেকে অব্যাহতি

ক্রাইম রিপোর্ট ডেস্ক []কাঁচামাল আমদানি বা পণ্য রফতানির জন্য নিবন্ধন নিতে যেকোনো বাণিজ্য সংগঠনের সদস্য হওয়া বাধ্যতামূলক ছিল ব্যবসায়ীদের। আমদানি-রফতানির আগেই নিতে হতো কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সনদ। পোষক কর্তৃপক্ষের নিবন্ধন সনদ ও কারখানা পরিদর্শন প্রতিবেদনও জমা দেয়া বাধ্যতামূলক ছিল আমদানি-রফতানির জন্য নিবন্ধন নিতে। ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করতে আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে এমন অন্তত ২১ ধরনের ডকুমেন্টেশন থেকে ব্যবসায়ীদের ছাড় দিয়েছে সরকার।

সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত একটি আদেশ জারি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আদেশে শিল্পে আমদানি সনদ (আইআরসি) পেতে আবেদনের সঙ্গে ২২ ধরনের কাগজপত্রের পরিবর্তে ১৩ ধরনের কাগজপত্র, বাণিজ্যিক আইআরসিতে ১৪ ধরনের কাগজপত্রের পরিবর্তে ১১, রফতানি সনদে (ইআরসি) ১৪টির পরিবর্তে ১১ ও ইন্ডেন্টিং সার্ভিসের ইআরসির ক্ষেত্রে কাগজপত্র ১৪টি থেকে আটটিতে নামিয়ে আনা হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যবসা শুরুর আগে নিবন্ধনে সবচেয়ে বেশি হয়রানির শিকার হতে হয় উদোক্তাদের। নানা দপ্তরে ঘোরার কারণে ব্যবসার ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। হয়রানির ভয়ে উদ্যোক্তা হতেও আগ্রহী হন না অনেকে। সহজে ব্যবসা করার সুযোগ বা ইজ অব ডুয়িং বিজনেস ইনডেক্সে বাংলাদেশ প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে আছে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে আমদানি-রফতানির নিবন্ধনসহ পুরো প্রক্রিয়াটি নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় আইআরসি-ইআরসি সনদপ্রাপ্তিতে কাগজপত্রের সংখ্যা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবসায়ীদের সনদও দেয়া হচ্ছে।

আমদানি ও রফতানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান নিয়ন্ত্রক অনুপ কুমার সাহা বলেন, বর্তমানে সিসিআইইর সব সেবা সিটিজেন চার্টার অনুযায়ী তিনদিনের মধ্যে দেয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা যেন আরো সহজে আমদানি-রফতানি সনদ পেতে পারেন, সেজন্য নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। এটি পূর্ণাঙ্গরূপে চালু করা গেলে ঘরে বসেই ব্যবসায়ীরা সনদ পাবেন। এছাড়া লাইসেন্স ফি কমানোর জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।

জানা গেছে, ব্যবসায়ীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমদানি-রফতানি ও ইন্ডেন্টিং সার্ভিস নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট কমানোর উদ্যোগ নেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আমদানি-রফতানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের উদ্যোগে ২০১৮ সালে এ উদ্যোগ নেয়ার পর শিল্পে আমদানি সনদ (আইআরসি), বাণিজ্যে আমদানি সনদ ও রফতানি সনদ নিবন্ধনে ডকুমেন্ট কমিয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি আদেশ জারি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আগে আইআরসি পেতে আবেদনের সঙ্গে ২২ ধরনের কাগজপত্র জমা দিতে হতো। এখন থেকে ১৩ ধরনের কাগজ দিলেই সনদ মিলবে। একইভাবে বাণিজ্যিক আইআরসি, রফতানি সনদ, ইন্ডেন্টিং সার্ভিসের ইআরসির ক্ষেত্রে কাগজপত্রের সংখ্যা ১৪ থেকে আটটিতে নামিয়ে আনা হয়েছে।

বর্তমান আদেশ অনুযায়ী শিল্পে আইআরসি পেতে প্রতিষ্ঠানের প্যাডে মালিক/ব্যবস্থাপনা অংশীদার/ব্যবস্থাপনা পরিচালকের স্বাক্ষর, ছবিসহ আবেদন করতে হবে। সঙ্গে হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, আয়কর প্রত্যয়নপত্র, চেম্বার বা অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যের সনদপত্র, ব্যাংক প্রত্যয়নপত্র, ফায়ার লাইসেন্স, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট অব ইনকরপোরেশন অথবা অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে রেজিস্টার্ড অংশীদারি চুক্তিপত্র, আবেদনকারীর জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট কিংবা নাগরিকত্বের সনদ, এলসিএ বিবরণী কপিসহ আমদানি স্বত্বের ৭০ শতাংশ ব্যবহারের দলিল, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে জয়েন্ট ভেঞ্চার এগ্রিমেন্ট, লিস্ট অব এমপ্লয়ি (নাম, পদবি, বেতন ও জাতীয়তাসংবলিত) দিতে হবে।

বাণিজ্যিক আইআরসির জন্য ১০ ধরনের কাগজ জমা দিতে হবে। এগুলো হচ্ছে ট্রেড লাইসেন্স, বাণিজ্য চেম্বার বা অ্যাসোসিয়েশনের বৈধ মেম্বারশিপ সার্টিফিকেট, ফির কপি ও ভ্যাট চালানের কপি, লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট অব ইনকরপোরেশন অথবা অংশীদারি প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে রেজিস্টার্ড অংশীদারি চুক্তিপত্র, বিদেশে নিবন্ধিত কোম্পানির বাংলাদেশ শাখা অফিসের ক্ষেত্রে সার্টিফিকেট অব ফাইলিং ও বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) অনুমোদনের কপি, আয়কর প্রত্যয়নপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র, ব্যাংকের ইস্যুকৃত প্রতিষ্ঠানের আর্থিক স্বচ্ছতার প্রমাণপত্র, জয়েন্ট ভেঞ্চার এগ্রিমেন্টের কপি, কর্মীর তালিকা (নাম, পদবি, বেতন ও জাতীয়তাসংবলিত), বিদেশীদের বৈধ ওয়ার্ক পারমিটসহ পাসপোর্টের কপি। একই কাগজপত্র জমা দিতে হবে ইআরসি ও ইন্ডেন্টিং সার্ভিসের সনদ নিতেও।

নতুন আদেশ অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের শিল্প স্থাপনে পোষক কর্তৃক জারিকৃত নিবন্ধনপত্রের কপি, মেমোরেন্ডাম অ্যান্ড আর্টিকেলস অব অ্যাসোসিয়েশন, পোষক কর্তৃক কারখানা পরিদর্শন প্রতিবেদন, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের সনদ, বন্ড লাইসেন্স, বিধি মোতাবেক অন্যান্য সংস্থার অনুমোদন, একই প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানায় অন্য প্রতিষ্ঠান না হওয়ার অঙ্গীকার, লিজ ও এগ্রিমেন্টের প্রমাণপত্র, বিদেশীদের ওয়ার্ক পারমিটসহ বৈধ পাসপোর্টের ফটোকপি, বিদেশী পরিচালকের নিজের উপস্থিতি বা পাওয়ার অব অ্যাটর্নির প্রমাণপত্র দাখিল থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

আমদানি-রফতানি নিবন্ধনে কাগজপত্র কমিয়ে আনার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এ প্রসঙ্গে বণিক বার্তাকে বলেন, আমাদের দেশে ব্যবসায়ীদের প্রধান সমস্যা ইজ অব ডুয়িং বিজনেস। একজন ব্যবসায়ীকে ব্যবসা শুরু করার আগেই বহু জায়গায় যেতে হয় ডকুমেন্টের জন্য। কাঁচামাল আমদানির আগেই এত সব কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে হয়রানির শিকার হন অনেকে। কাঁচামাল আমদানির সহজ সুযোগ না থাকার কারণেই অনেকে উদ্যোক্তা হতে চান না। আমদানি-রফতানিতে ডকুমেন্ট যত কমিয়ে সহজে সেবা দেয়া যায়, অর্থনীতির জন্য তত ভালো।

সূত্র:বনিক বার্তা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category