সোমবার, ২রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শাহরাস্তির নাহারা-পরানপুর এখন মাদক কারবারিদের হটস্পট!  

  • অনুসন্ধানী প্রতিবেদন 

বিশেষ প্রতিবেদক,চাঁদপুর


সীমান্তবর্তী তিন জেলার মধ্যে মাদক চোরাচালানের নিরাপদ হটস্পট এখন চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার নাহারা-পরানপুর গ্রাম।এই দুই গ্রাম এখন মাদক কারবারিদের অভয়ারণ্য।এই গ্রামের মাদক কারবারিদের অনেকেই রাতারাতি বনে গেছেন কোটিপতি।আবার কেউ কেউ মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়ে জামিনে এসে ঢাকায় বসেই নিয়ন্ত্রণ করছেন মাদক বাণিজ্য।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে পেটের ভেতরে করেই মাদক পাচার করছেন অনেকেই।মাদক কারবারিদের গডফাদাররা বরাবরই রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।অভিযোগ উঠেছে, উপজেলার ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় বিতর্কিত রাজনৈতিক নেতা,স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান-মেম্বার ,রাজমিস্ত্রীদের একটি চক্র সহ ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সখ্যতা রয়েছে মাদক কারবারি চক্রের সাথে।ক্রাইম রিপোর্টের অনুসন্ধানে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে।


শাহরাস্তির পরানপুর গ্রামের রাজমিস্ত্রী মনিরকে ইয়াবা সহ আটক করে র‍্যাব-১১।

  • অনুসন্ধানে জানা গেছে,চাঁদপুরের সীমান্তবর্তী নিরিবিলি এলাকা হিসেবে পরিচিত নাহারা- পরানপুর গ্রাম।কুমিল্লার লাকসাম- মনোহরগঞ্জ উপজেলার সাথে এই দুই গ্রামে যাতায়াত ব্যবস্থা বেশ উন্নত।অপরদিকে নোয়াখালী থেকে চিতোষী হয়ে অসংখ্য শাখা সড়কে মাদকের অভয়ারণ্যখ্যাত নাহারা-পরানপুর গ্রামে আসা যায়।এই দুই গ্রামের ভেতর আবার অসংখ্য শাখা সড়ক রয়েছে।এতে খুব সহজেই শাহরাস্তির কালিবাড়ি -দোয়াভাঙা হয়ে চাঁদপুরে মাদক পাচারে এসব রুট ব্যবহার করছে মাদক কারবারিরা।আবার বিকল্প সড়ক হিসেবে রয়েছে সীমান্তবর্তী চিতোষী থেকে মোল্লার দরজা সড়কসহ অসংখ্য শাখা সড়ক। যেসব সড়ক এখন মাদক কারবারিদের নিরাপদ রুট। অভিযোগ উঠেছে,স্থানীয় প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করে মাদক কারবারি চক্র উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে কোটি কোটি টাকার মাদক পাচার করে আসছে এসব রুটে।যার হটস্পট নাহারা পরানপুর গ্রাম।এখান থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে কোটি কোটি টাকার মাদক বাণিজ্যের সক্রিয় সিন্ডিকেট।

ক্রাইম রিপোর্টের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে,গত শনিবার রাতে রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের পরানপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে গভীর রাতে  চার হাজার ৭৫০ পিস ইয়াবাসহ মনির হোসেন (২৯) নামে এক মাদক কারবারিকে আটক করে র‍্যাব।র‍্যাব-১১ সিপিসি-২ এর একটি আভিজানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে পরানপুর গ্রামের আমির হোসেন মুন্সির বড় ছেলে মনিরকে আটক করে। মনির পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি।রাজমিস্ত্রী পেশার আড়ালেই মাদক কারবার করতেন মনির। এই মনির দুইটি বিবাহ করেছে। নরসিংদীর শিবচর ও বরিশাল তাঁর শুশুরালয়।গ্রেফতার হওয়ার দুই দিন আগেই নারায়ণগঞ্জ থেকে বাড়ি এসেছিল মনির।
র‍্যাবের মিডিয়া উইং সূত্রে জানা গেছে,দীর্ঘদিন ধরে মনির কক্সবাজারের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে অভিনব কায়দায় পেটের ভেতর করে মাদক দ্রব্য ইয়াবা নিয়ে এসে চাঁদপুরের বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকসেবিদের নিকট পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করতো।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, পুরো জেলায় একটা রাজমিস্ত্রী চক্র ইয়াবা কারবারের সাথে জড়িত রয়েছে।এরমধ্যে হাজীগঞ্জ এলাকায় কয়েকজন কনস্ট্রাকশন ঠিকাদারও রয়েছেন ইয়াবা কারবারে জড়িত।গত বছর ফরিদগঞ্জের এক রাজমিস্ত্রীকে ইয়াবা বিক্রির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে সন্দেহভাজন হিসেবে হাজীগঞ্জের থানা এরিয়া থেকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।পরে কোনো আলামত না পেয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়।
অপরদিকে মাদকের অভয়ারণ্য খ্যাত নাহারা-পরানপুরের মধ্যে নাহারাতেই রয়েছে ১৫ জন চিহ্নিত মাদক কারবারি। যারা বিগত সময়ে মাদকের মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন।আবার অনেকেই গ্রেফতার এড়াতে আত্মগোপনে থাকলেও ইয়াবা কারবার নিয়ন্ত্রণ করছেন আড়ালে থেকে। অনুসন্ধানে যার সত্যতা পাওয়া গেছে।
অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে,শাহরাস্তির সীমান্তবর্তী এলাকায় মাদক কারবারে একজন জনপ্রতিনিধির সম্পৃক্ততা থাকার অভিযোগ উঠে।কিন্তু বরাবরই তিনি থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর শাহরাস্তি উপজেলার মেহার দক্ষিন ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ড মেম্বার সোহরাব হোসেনকে (৩৫) চার হাজার ৩৮০পিচ ইয়াবাসহ আটক করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মেট্রো উত্তরের উপ-পরিচালক।



চট্টগ্রাম শহরের বাকলীয়া থানাধীন চর চাক্তাই শাহ আমানত সেতু এলাকায় হানিফ পরিবহনে কক্সবাজার থেকে চাঁদপুরের শাহরাস্তি আসার পথে বাস তল্লাশি চালিয়ে সোহরাব হোসেনকে ইয়াবা ট্যাবলেট সহ হাতেনাতে গ্রেফতার করেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, চট্রগ্রাম মেট্রো উত্তরের অভিযান দল।সোহরাবকে আটকের পরপরই শাহরাস্তিতে মাদক কারবারিরা আরও বেপরোয়া হয়ে যায়।তবে পরানপুরের মনিরকে ইয়াবাসহ আটকের পর কয়েকজন স্থানীয় ইউপি সদস্য গা ঢাকা দেয়ার অভিযোগ উঠে।

Comments are closed.

More News Of This Category