সোমবার, ২রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভাই আমাকে মাইরেন না, আমি মসজিদের ইমাম

টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ওয়ারেন্টভুক্ত আসামি ধরতে গিয়ে স্থানীয় এক মসজিদের ইমামকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। মূলত, ওয়ারেন্টভুক্ত ওই আসামি ও ইমামের বাবার নাম এক হয়ে যাওয়ায় এ বিপত্তি ঘটেছে বলে জানা গেছে।

এদিকে উপজেলার সংগ্রামপুর ইউনিয়নের আমুয়াবাইদ গ্রামে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ঘটে যাওয়া এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। শুক্রবার (৩ মে) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এবং দোষীদের শাস্তি দাবি করে মানববন্ধন করেছেন বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।

খোঁজ নিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে আব্দুর রাজ্জাক নামে এক ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিকে ধরতে আমুয়াবাইদ গ্রামে যায় ঘাটাইল থানার পুলিশ। কিন্তু ভুল করে পুলিশ সদস্যরা প্রবেশ করেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম গোলাম রাব্বানীর (২৭) বাড়িতে। কারণ, তার বাবার নাম আব্দুর রাজ্জাক মৃধা। ইমাম গোলাম রাব্বানীর অভিযোগ, রাতে দরজা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে তাকে মারধর করেছেন থানার উপপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম, সহকারী উপপরিদর্শক আলমগীর হোসেন এবং কনস্টেবল রুবেল রানা, রুহুল আমিন ও মিজানুর রহমান।

গোলাম রাব্বানী জানান, রাত দেড়টার দিকে তার বসত ঘরের দরজায় খটখট শব্দ হয়। এ সময় ভয়ে দরজা না খুললে তা ভেঙে তার বোনের কক্ষে প্রবেশ করেন কয়েকজন লোক। ডাকাত ভেবে পাশের কক্ষে খাটের নিচে লুকান গোলাম রাব্বানী। পরে নিজেদের পুলিশ বলে পরিচয় দেন লোকগুলো এবং খাটের নিচ থেকে টেনে বের করেন রাব্বানীকে। তাকে হাতে ধরে ঘরের বাইরে নিয়ে আসেন একজন, পেছন থেকে অপরজন মারেন লাথি।

এ সময় গোলাম রাব্বানী তাকে এভাবে ধরে নিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে পুলিশ সদস্যদের একজন বলেন, ‘তোর নামে মামলা আছে। তোর কারেন্ট বিল বাকি আছে।’ তখন রাব্বানী বলেন, ‘ভাই আমারে মাইরেন না, আমি মসজিদের ইমাম, আমার কোনো কারেন্ট বিল বাকি নাই।’ এ কথা বলার পর পাশে থাকা আরেক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘তোরে ইমামতি শিখাইছে ক্যারা?’ এরপর রাব্বানী মামলার কাগজপত্র দেখতে চাইলে পুলিশ সদস্যরা বলেন, ‘আগে থানায় চল, তারপর কাগজপত্র দেখামু।’

এভাবেই পার হয়ে যায় প্রায় বিশ মিনিট। হইচই শুনে আশেপাশের লোকজন এসে জড়ো হন ওই বাড়িতে। তারা মামলার কাগজপত্র দেখতে চাইলে পুলিশ তাদের কাগজপত্র দেখায়। তাতে দেখা যায় মামলায় আসামির নাম আব্দুর রাজ্জাক।

গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আমার বাবার নাম আব্দুর রাজ্জাক মৃধা ঠিক আছে, কিন্তু আমার দাদার নাম লাল মাহমুদ মৃধা। মামলার কাগজপত্র দেখার পর আমার বাবার ভোটার আইডি কার্ড দেখালে লোকজন ক্ষেপে যায় এবং আমাকে রেখে চলে যায় পুলিশ। আমার নামে কোনো মামলা নেই, আমি একজন ইমাম পরিচয় দেওয়ার পরও আমাকে মারধর করার বিচার চাই।’

এ বিষয়ে জানতে শুক্রবার (৩ মে) কল করা হয় পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক ও ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আলমগীর হোসেনের মোবাইল নম্বরে। এ সময় কল রিসিভ করলেও সংবাদকর্মীর পরিচয় পেয়ে ‘মিটিংয়ে আছি’ বলে কল কেটে দেন তিনি।

এদিকে বিনা অপরাধে একজন মসজিদের ইমামকে মারধরের ঘটনাটি নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। শুক্রবার বিকেলে ঘটনার সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিচার চেয়ে ঘাটাইল থানার সামনে মানববন্ধন করতে যায় শতাধিক লোক। শুরুতে পুলিশ বাধা দিলেও পরে সংবাদকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে নিষ্ক্রিয় থাকে তারা।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় ঘাটাইল থানার ওসি মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়ার কাছে। জবাবে তিনি বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করতে গ্রাম পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে থানা থেকে পুলিশ কর্মকর্তা যান। ইমামকে মারধর করার বিষয়টি সত্য নয়। তবে উভয়ের মধ্যে কথাকাটি হতে পারে। এ বিষয়ে থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি এখনও।

এ বিষয়ে পরে যোগাযোগ করা হয় টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গোপালপুর সার্কেল) মোহাম্মদ মোনাদির চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, বিষয়টি অবগত হওয়ার পর ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসীর সঙ্গে থানায় বসে আমি কথা বলেছি। মূলত ভুক্তভোগীর বাবার নামের সঙ্গে আসামির নাম মিলে যাওয়ায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। তবে ইমামকে মারধরের বিষয়টি সত্য নয়। ওয়ারেন্ট তামলি করার ক্ষেত্রে পুলিশের কর্তব্যে কোনো ব্যত্যয় ঘটে থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category