ক্রাইম রিপোর্ট ডেস্ক
ময়মনসিংহ নগরীর প্রাণকেন্দ্র গাঙ্গিনারপাড় এলাকার একটি ব্যস্ততম শপিংমলের মোবাইল মার্কেটে চুরি হয়েছে। বুধবার সকাল ১০টায় মার্কেটের একটি দোকানের তালা ভেঙে আড়াই শ স্মার্টফোনসহ ১০ লাখ টাকা চুরির অভিযোগ করেছেন দোকানমালিক।
এদিকে মঙ্গলবার দিনগত রাত ১টায় নগরীর জিলা স্কুল মোড়ে এক রেস্তোরাঁ মালিককে বেঁধে রেখে তার বাড়ি থেকে নগদ ২৩ লাখ টাকাসহ দুই লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে গেছে ডাকাতরা। এ ঘটনায় রেস্তোরাঁ মালিকের স্ত্রী কোতোয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
পুলিশ জানায়, গাঙ্গিনারপাড় এলাকার শপিংমল অলকা নদী বাংলা কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলার জিরো পয়েন্ট মোবাইল শপ নামের দোকানের তালা ভেঙে স্মার্টফোন নিয়ে যায় ৫-৬ অজ্ঞাতনামা যুবক। মোবাইলফোনের দোকানের স্বত্বাধিকারী হৃদয় খানের দাবি, দোকানটিতে ২৮০টির মতো মোবাইল ফোন ছিল। সকাল ১০টার দিকে দুর্বৃত্তরা তার দোকানে ঢুকে আনুমানিক ২৫০টি মোবাইল নিয়ে যায়। এছাড়াও তার ক্যাশ বক্স ভেঙে ১০ লাখ টাকা নিয়ে যায় চোরচক্র। এতে প্রায় এক কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং সিআইডির বিশেষজ্ঞ টিম ঘটনাটি তদন্ত করছে। পরিদর্শনকারী পুলিশ দলের নেতৃত্বে থাকা ময়মনসিংহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করে যারা জড়িত তাদের শনাক্তের চেষ্টা করব। তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত সময়ের ভেতর আসামি গ্রেপ্তার করতে পারব বলে আশা করছি।’
এর আগে, মঙ্গলবার দিনগত রাত ১টায় জিলা স্কুল মোড়ে অবস্থিত ‘‘চাচার হোটেল’’ নামক রেস্তোরাঁর মালিককে নিজ বাড়িতে আটকে রেখে মালামাল ও নগদ টাকা নিয়ে যায় ডাকাতরা। কোতোয়ালি থানায় করা অভিযোগে বলা হয়েছে, রাত ১টার সময় অজ্ঞাতনামা ২-৩ জন সাবিনা ইয়াসমিনের স্বামী মোসা খন্দকারকে (৫০) তাদের জিলা স্কুলের মোড় সংলগ্ন বাসভবনে ঢুকে হাত-পা ও মুখ বেঁধে নগদ ২৩ লাখ টাকা ও আনুমানিক দুই লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণালঙ্কার চুরি করে নিয়ে গেছে।
এ ঘটনায় কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণ করছে পুলিশের টিম। আশা করছি দ্রুতই এর রহস্য উদঘাটন করতে পারব।’
বাড়ছে অপরাধ, আতঙ্কে নগরবাসী
ময়মনসিংহ নগরীতে গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকটি চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও খুনের ঘটনায় নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে মনে করছে সাধারণ মানুষ। এতে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
গত ১৭ জুন দিনেদুপুরে নগরীর ব্যস্ততম এলাকায় এক ব্যাংক কর্মকর্তার কাছ থেকে ছিনতাইকারীরা লক্ষাধিক টাকা নিয়ে যায়। ভুক্তভোগী মো. মনিরুল হক (৩১) জানান, তিনি আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ময়মনসিংহ শাখার কর্মস্থল থেকে অটোরিকশায় করে বাসায় ফিরছিলেন। মাসকান্দা বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন বাইপাস এলাকায় পৌঁছামাত্র কয়েকজন যুবক তার পথরোধ করে টাকা ছিনিয়ে নেয়।
ঘটনার পরপরই কোতোয়ালি মডেল থানার ৩ নম্বর ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ আবুল হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল অভিযানে নামে। অভিযানে তিন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়। এ ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ময়মনসিংহ শাখার ব্যবস্থাপক মশিউর রহমান বলেন, ‘আমাদের সহকর্মী ছিনতাইকারীর কবলে পড়ার পাশাপাশি শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কারণে আতঙ্কিত। অফিসের সকলকে সতর্কতার সাথে চলার জন্য বলা হয়েছে।’
গত ১৬ জুন ভোরে নগরীর মিন্টু কলেজ রেলক্রসিং সংলগ্ন অটোরিকশার যাত্রী এক যুবকের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, ঘড়ি ও মানিব্যাগ ছিনতাই করে তিন যুবক। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে নানা সমালোচনা সৃষ্টি হয়।
একই দিন (১৬ জুন) ময়মনসিংহ নগরীর ক্লিনিক মালিক সমিতি চাঁদাবাজদের দৌরাত্ম্যের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। তারা অভিযোগ করে, স্থানীয় কিছু চক্র ক্লিনিকগুলোতে নিয়মিত চাঁদা দাবি করছে এবং চাঁদা না দিলে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিচ্ছে। ক্লিনিক মালিকরা প্রশাসনের কাছে দ্রুত পদক্ষেপের দাবি জানালেও তাদের দাবি, পরিস্থিতির এখনও তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।
অপরাধ বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সদস্য সচিব আল নূর মোহাম্মদ আয়াস ইনডিপেনডেন্টকে বলেন, ‘শুধু অপরাধ দমনের মাধ্যমেই নয়, বরং অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। প্রশাসনের দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপই পারে এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিতে।’
সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সম্পাদক আলী ইউসুফ বলেন, ‘সম্প্রতি ময়মনসিংহ শহরে আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতির কারণে চুরি, ছিনতাই, খুন এবং অসামাজিক ঘটনা হচ্ছে। জুলাই বিপ্লবের পর পুলিশের অবস্থা নড়বড়ে হওয়ায় এমন হচ্ছে। রাজনৈতিক মধ্যস্থতায় তারা নিজেদের ব্যস্ত রাখায় সামাজিক শৃঙ্খলা ফিরছে না। পুলিশ নৈতিকভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করলে সামাজিক শৃঙ্খলা আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।’
আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি বা অবনতি নির্ধারণের কোনো মানদণ্ড নেই উল্লেখ করে পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, ‘চোর ও ছিনতাইকারীদের ধরে নিয়মিত গ্রেপ্তার করে আলাদতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। গত ৩-৪ মাসে ১৩১ জন ছিনতাইকারীকে ধরা হয়েছে। তারা আবার জামিনে বের হয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।’