ক্রাইম রিপোর্ট ডেস্ক
ভারত মহাসাগরে জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহ নামের জাহাজটি উদ্ধারে প্রাথমিক তৎপরতা শুরু হয়েছে। সেই জায়গায় সবচেয়ে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে নাবিকদের নিরাপত্তা বিষয়টিকে। একই সঙ্গে জাহাজটির বীমাকারী যুক্তরাজ্যের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে জাহাজের মালিকপক্ষ। এদিকে জিম্মির খবর আসার পর থেকে পরিবারগুলোর আহাজারি চলছে।
সোমালিয়া জলসীমায় জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজের নাবিকদের সুস্থ ফেরত আনার বিষয়ে সরকার বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। এ ধরনের প্রক্রিয়াগুলোতে একটু সময় লাগে। প্রথমে দর–কষাকষি করতে সময় চলে যায়। পরিস্থিতি যাই হোক না কেনো, পরিবারের কাছে জিম্মিদের ফিরিয়ে দিতে যা যা করণীয় তার পরিকল্পনায় যথেস্ট সতর্ক ও আন্তরিক সরকার।
মোজাম্বিক থেকে ৫০ হাজার টন কয়লা নিয়ে দুবাই যাওয়ার পথে গত মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায় জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ। যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনের তথ্য অনুযায়ী, এ সময় জাহাজটির অবস্থান ছিল সোমালিয়ার রাজধানী মোগাদিসু থেকে ৬০০ নটিক্যাল মাইল পূর্বে ভারত মহাসাগরে। জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন। তিন মাস আগে গ্রুপের বহরে যুক্ত হয়েছিল জাহাজটি।
কী করছে সরকার
এতোগুলো মানুষ মাঝ সাগরে জিম্মি হয়ে আছে, এতো পরিবারের আহাজারি। প্রশ্ন উঠছে- এ পরিস্থিতিতে সরকার কি চুপ করে আছে।সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্তর্জাতিক পরিসরে বিশেষত সমুদ্রে যখন এ ধরনের ঘটনার কবলে পড়তে হয় তখন অনেকগুলো পক্ষ থাকে। সবার সঙ্গে সমন্বয় করার কাজটি যেমন সরকারকে সমন্বয় করতে হয়, একইভাবে জিম্মিদের সুরক্ষার কথাও ভাবতে হয়। অপহরণ হওয়া জাহাজ উদ্ধারের অগ্রগতি জানতে চাইলে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বলা হচ্ছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা… এটা ভারত মহাসাগরে, বলা হচ্ছে সোমালিয়া থেকে প্রায় ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে জাহাজটি। জলদস্যু কারা এটাই এখনও আইডেন্টিফাইড নয়। ওই অঞ্চলটি সোমালিয়ান অঞ্চল সেটি বলা যেতে পারে। তবে সেটা কে তা (সোমালিয় জলদস্যু) বলা মুশকিল, সেটা আপনি হতে পারেন আমিও হতে পারি।’
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আমরা এ বিষয়ে অবহিত করেছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাহাজটাকে উদ্ধার করার জন্য আমরা সবার সহযোগিতা চেয়েছি। আমরা প্রথম যে বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছি সেটা হচ্ছে, জাহাজে ২৩ জন নাবিক রয়েছেন, সেই ২৩ জন নাবিকের জীবন নিরাপদ রাখা, জীবন রক্ষা করে তাদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে আসাটা হচ্ছে আমাদের প্রথম কাজ।’
আরও কী কী ভাবে কাজ শুরু হয়
দস্যুতাপ্রবণ কিংবা যুদ্ধরত অঞ্চলে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় জাহাজ চলাচলের জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে আলাদা করে বীমা করে থাকে জাহাজের মালিকপক্ষ। দস্যুতা, অপহরণ ও মুক্তিপণ বিমার জন্য উচ্চ প্রিমিয়াম দিতে হয় জাহাজের মালিকপক্ষকে। দস্যুতার কবলে পড়া বাংলাদেশি জাহাজটিরও বীমা করা ছিল বলে একটি সূত্র জানিয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বীমা কোম্পানির বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে কাজ করছেন ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন আবদুল কাদের। জিম্মি নাবিক ও জাহাজ উদ্ধারের প্রক্রিয়ার বিষয়ে তিনি জানান, জাহাজের বীমা করা থাকলে বীমাকারী প্রতিষ্ঠানের দক্ষ দলই মূলত জলদস্যুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। জলদস্যুদের পক্ষ হয়ে মুক্তিপণের দাবি নিয়ে দর–কষাকষির জন্য অনেকগুলো মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানও রয়েছে। সমঝোতা হলে মুক্তিপণ নিয়ে জাহাজ ও নাবিকদের ছেড়ে দেয় দস্যুরা।
সরকারের সতর্কতা ও সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এখানে অনেকগুলো পার্ট আছে। আমরা এ সম্পর্কে অবহিত হওয়ার পরপরই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছি। আমাদের ডিপার্টমেন্ট অব শিপিং, তাদের সঙ্গে যে আন্তর্জাতিক উইংগুলো কাজ করে সবাইকে অ্যালার্ট করা হয়েছে। আমাদের যেহেতু সার্বভৌমত্বের দায়িত্বে আছে বাংলাদেশ নেভি, তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। আশা করছি শিগগির ভালো ফল পাওয়া যাবে।’