বৃহস্পতিবার, ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্যাংকের অবসায়ন হলে ৬ মাসের মধ্যে গ্রাহক পাবেন ১ লাখ টাকা

 

ডেস্ক রিপোর্ট

কোনো আমানতকারী ব্যাংকে তার যত টাকাই আমানত রাখুক না কেনো, ব্যাংক ও ব্যাংকবর্হিভূত কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবসায়ন হলে অবসায়নের ৬ মাসের (১৮০ দিনের) মধ্যে প্রত্যেক গ্রাহক ১ লাখ টাকা করে ফেরত পাবেন। এর মধ্যে অবসায়নের প্রথম ৯০ দিনের মধ্যে আমানতকারীকে টাকা ফেরত পেতে আবেদন করতে হবে।

আবেদনের পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে প্রত্যেক গ্রাহকে ১ লাখ টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এতে করে ৯২ শতাংশ আমানতকারী (ক্ষুদ্র আমানকারী) তাদের আমানতের টাকাই ফেরত পেয়ে যাবেন। অবশিষ্ট ৮ শতাংশ আমানতকারী (বড় আমানতকারীরা) তাদের আমানতের বাকি টাকা ব্যাংকের দায়-দেনা হিসাবের  পর অনুপাতিক হারে ফেরত পাবেন।

বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল ভবনের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে আমানত বিমা ট্রাস্ট তহবিল (ডিআইটিএফ)-এর ওপর এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ‘ব্যাংক আমানত বিমা আইন’ সংশোধনী প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম এসব কথা বলেন। এইসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী মুখপাত্র ও জিএম আবুল কালাম আজাদ উপস্থিত ছিলেন।

মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবসায়ন হলে তার যত টাকাই থাকুক না কেন, সে মাত্র ১ লাখ টাকা পাবেন বিষয়টি এই রকম নয়। মূলত ১৮০ দিনের মধ্যে প্রত্যেক আমানতকারী ১ লাখ টাকা করে প্রথমে ফেরত দেওয়া হবে। যেহেতু ব্যাংকের অধিকাংশ গ্রাহক ক্ষুদ্র আমানতকারী তাই ১ লাখ টাকা করে দেয়া হলেও ৯২ শতাংশ আমানতকারীই তাদের টাকা ফেরত পেয়ে যাবেন। আর এক্ষেত্রে প্রথমে ব্যক্তি-শ্রেণির আমানতকারীকে এবং পরে প্রতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের টাকা পরিশোধ করা হবে। পরবর্তীতে বাকি টাকা অবসায়কের মাধ্যমে সম্পদ ও দায়-দেনা হিসাব করে অ্যাসেট ও লাইয়াবিলিটি অনুয়ায়ী অনুপাতিক হারে পরিশোধ করা হবে।

কোনো গ্রাহকের যদি ব্যাংকে ১ কোটি টাকা জমা থাকে তাকে ১ লাখ টাকা দেয়ার পর বাকি ৯৯ লাখ টাকা কতদিনে এবং পুরো টাকা ফেরত পাবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাব সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্যাংকের সম্পদের চেয়ে যদি দেনার পরিমাণ বেশি থাকে তাহলে গ্রাহকের পুরো টাকা পাবে না। সেক্ষেত্রে অনুপাতিকহারে বাকি টাকা পরিশোধ করা হবে’।

বর্তমানে ব্যাংক খাতে ৮০ হাজার লোকের আমানত ১ কোটি টাকার ওপরে এইক্ষেত্রে তারাও ১ লাখ টাকা করে পেলে বাকি টাকা কিভাবে পাবেন এমন প্রশ্নের জবাবে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘১ লাখ টাকা করে দেওয়ার পর অবসায়ন হওয়া ব্যাংকের সম্পদ বিক্রি করে অথবা ব্যাংকের পাওনা টাকা আদায় সাপেক্ষে গ্রাহকদের আমানতের টাকা অনুপাতিকহারে পরিশোধ করা হবে।’

সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এতদিন আমানত সুরক্ষা আইনটি কেবল ব্যাংকের গ্রাহকদের সুরক্ষা দিতো। নতুন সংশোধনী আইনে ব্যাংক বর্হিভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদেরও এই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘আগের আইনে মাত্র ৬০ হাজার টাকা পাওয়ার সুযোগ ছিল এবং তা কেবল ব্যাংকের গ্রাহকরাই পেতো। নতুন সংশোধনী আইনে তা ১ লাখ টাকা করা হয়েছে। একইসঙ্গে তা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও এই আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে আমানত বিমায় আমানতের পরিমাণ হলো ৮ হাজার ৭৪৭ কোটি ৫৭ লাখ টাকা রযেছে। এই টাকা থেকেই কোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অবসায়ন হলে তাদেরকে ১ লাখ টাকা করে পরিশোধ করা হবে।‘ আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক থাকতে ভবিষ্যতে আর কোনো ব্যাংক অবসায়ন হবে না।’

লিখিত বক্তব্যে মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের তফসিলি ব্যাংকসমূহের ক্ষুদ্র আমানতকারীদের স্বার্থ সুরক্ষার লক্ষ্যে ১৯৮৪ সালে ‘দ্য ব্যাংক ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স অ্যাক্ট-১৯৮৪’ জারি করা হয়। ওই অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী যেকোনো তফসিলি ব্যাংক অবসায়নের ক্ষেত্রে আমানতকারীদের আমানতের অর্থ ফেরত প্রদানের জন্য কভারেজের পরিমাণ ধার্য করা হয়েছিল ৬০ হাজার টাকা। পরে ২০০০ সালে ওই অর্ডিন্যান্স রহিত করে ব্যাংক আমানত বিমা আইন-২০০০ (ব্যাংক ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স অ্যাক্ট-২০০০) প্রবর্তন করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘ব্যাংক আমানত বিমা আইন-২০০০’-এ আমানতকারীদের স্বার্থ আরও সুরক্ষিত করতে কভারেজের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ১ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ‘ব্যাংক আমানত বিমা আইন-২০০০ এ একজন আমানতকারীর জন্য ইন্স্যুরেন্স কভারেজের পরিমাণ নির্ধারিত থাকলেও কভারেজের পরিমাণ বৃদ্ধি করার কোনো সুযোগ ছিল না। বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে তফসিলি ব্যাংকের ন্যায় নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকেও ডিপোজিট ইন্সুরেন্সের আওতায় আনা এবং ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স কভারেজের পরিমাণ বৃদ্ধি করে ‘ব্যাংক আমানত বিমা আইন-২০০০’ সংশোধন করে ‘আমানত সুরক্ষা আইন-২০২০’ চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সক্রিয় বিবেচনাধীন রয়েছে।’

তিনি বলেন, বর্তমান বিমা তহবিলে সংরক্ষিত টাকার পরিমাণ অনুযায়ী ৯২ ভাগ আমানতকারীর হিসাব সম্পূর্ণ বিমাকৃত। এর বাইরেও, ‘ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১’ এর ৭৪ ধারা অনুসারে কোনো তফসিলি ব্যাংক অবসায়িত হলে ব্যাংকের সম্পদ হতে আমানতকারীদের পাওনা পরিশোধের সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে।

Comments are closed.

More News Of This Category