ক্রাইম রিপোর্ট ডেস্ক
রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ফুটপাতে ছোলামুড়ি-চটপটির মতো খাবার সহজলভ্য ও সস্তা হওয়ায় ব্যাপক জনপ্রিয়। নগরে কাজের প্রয়োজনে আসা বিপুল সংখ্যক মানুষ এসব খাবারের ওপর নির্ভরশীল। যদিও রাস্তার খাবার কিংবা সাধারণ রেস্তোরাঁর খাবার কতটা স্বাস্থ্যকর এমন প্রশ্ন রয়েই যায়। অনেকেই আবার শখের বশেও প্রতিনিয়ত খাচ্ছেন এসব খাবার। রাস্তার পাশে চটপটি ও ফুচকার জনপ্রিয়তা তারই প্রমাণ দেয়। তবে বিভিন্ন সড়কের ফুটপাতে বিক্রি হওয়া খাবারে নানা ধরনের জীবাণু রয়েছে।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকার পথখাবারে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণু রয়েছে। ছোলামুড়ি, চটপটি, স্যান্ডউইচ, আখের রস, অ্যালোভেরা জুস, মিক্সড সালাদে মাত্রাতিরিক্ত ই-কোলাই, ভিবরিও এসপিপি ও সালমেনেলার মতো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে। এসব জীবাণু ডায়রিয়া ও পেটের পীড়ার জন্য দায়ী।
গবেষণায় ৬ ধরনের খাবারে ৪৫০ স্যাম্পল নেয়া হয়েছে। যার দূষিত পানি, নোংরা গামছা, অপরিস্কার হাত, ধুলাবালিময় পরিবেশের কারণে এই ধরণের জীবাণু খাবারে মিশে যাচ্ছে বলে গবেষণায় জানা যায়। বিক্রেতাদের হাইজেন, স্যানিটেশন ও শিক্ষা সম্পর্কে ধারণা কম থাকায় খাবার জীবাণুবাহী হয়ে যাচ্ছে। বিক্রেতার স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে ধারণা না থাকায় জুসের মগ ও গ্লাস জীবাণুবাহী হয়ে পড়ে। এইভাবে কন্টামেশনের কারণে ব্যাকটেরিয়া উৎপাদন বাড়ে। অ্যালোভেরা শরবতে এই ধরণের জীবাণু পাওয়া গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর এডভান্সড রিসার্স সায়েন্স’র প্রধান বিজ্ঞানী মো. লুতফুল কবীর বলেন, এসব খাবারে ই-কোলাই ও সালমেনেলার মতো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর জীবাণু পাওয়া গেছে। এসব খাবার খেয়ে মানুষ সংক্রামিত হচ্ছে, তবে অসুস্থ হচ্ছে না। এটি একটা ইউনিক বিষয়। এটা ভালো বিষয়।
তিনি বলেন, বিশুদ্ধ পানির অভাব রয়েছে। বিক্রেতারা পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মানেন না। এসময় তিনি পথখাবার নিরাপদ করতে বিক্রেতাদের প্রশিক্ষণ ও প্রাত্যহিক মনিটরিং করার উপর জোর দেন।
ই-কোলাই-সালমেনেলা খাবারে উপস্থিত থাকার কথা না। কিন্তু পথ খাবার ও জুস-সালাদে মাত্রাতিরিক্ত ই-কলাই, সালমোনাই পাওয়া গেছে। পাশাপাশি ভিবরিও এসপিপি পাওয়া গেছে। পথ খাবারের বিক্রেতাদের লাইসেন্সের আওতায় আনার প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, স্ট্রিট ফুড বিক্রেতারা লাইসেন্স ছাড়াই কাজ করে। তাদের আইনী কাঠামোর মধ্যে আনলে, বিক্রেতাদের জীবন-জীবিকা সহজ হবে।
ঢাকার কয়েক লাখ রিকশাচালক প্রতিদিন রাস্তার পাশেই খাচ্ছেন সস্তা ও মানহীন খোলা খাবার। ব্যস্ত অফিস কিংবা মার্কেটের আশপাশে যেসব খাবারের দোকান গড়ে উঠে সেগুলোতে খাদ্য উপাদানের চেয়ে আবর্জনার পরিমাণ বেশি। কার্যকর তদারকি না থাকায় রাস্তার পাশের খাবার হোটেল কিংবা খোলা খাবারের দোকানগুলো হয়ে উঠছে রোগজীবাণুর অন্যতম উৎস।
প্রতিদিন একজন বিক্রেতা গড়ে প্রায় দেড় শ জনের কাছে এমন পথের খাবার বিক্রি করেন। অনেকের চাহিদা মেটালেও জনস্বাস্থ্যের দিকটি সর্বাগ্রে ফুটপাতে এমন মুখরোচক খাবারে লোভ সামলানো অনেকের পক্ষেই কঠিন। কিন্তু খুব কম মানুষই জানে এসব খাবার কতটা ভয়ংকর। তাই তা খাওয়ার আগে সচেতন থাকা উচিত