রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কচুয়ায় ইজিপিপি প্রকল্পের কাজ শেষ না করে অর্থ আত্মসাতের পাঁয়তারা

বিশেষ প্রতিবেদক,চাঁদপুর


চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলায় ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাস্তবায়নাধীন অতি দরিদ্রদের জন্য আত্মকর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পের কাজ ৭ জানুয়ারি সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত ছিল। প্রকল্পের কাজ শেষ না করে নামমাত্র কাজ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাতের পাঁয়তারা করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলার ৯ নং কড়ইয়া ইউনিয়নের দুই ইউপি সদস্যসহ প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।এতে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতাভুক্ত স্বল্পমেয়াদি কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসন ও দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাসের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের নূন্যতম সুফল বঞ্চিত হয়েছেন প্রকল্পভুক্ত জবকার্ডধারী উপকারভোগীরা।ফলে প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন ভেস্তে যাওয়ার ক্ষোভে ফুঁসে উঠছেন প্রকল্প এলাকার সুবিধাবঞ্চিত মানুষ।

সূত্রমতে,অতিদরিদ্রদের জন্য আত্মকর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি)প্রকল্পে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রথম পর্যায়ের বাজেটে জেলার কচুয়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের ২ হাজার ৯২৮ জন উপকারভোগী অনুযায়ী নন- ওয়েজ কস্ট খাতে বরাদ্দ রয়েছে ২১ লাখ ৪৮ হাজার ৯৮৫ টাকা।ওয়েজ কস্ট খাতে বরাদ্দ রয়েছে ৪কোটি ৬৮ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। এরমধ্যে ৯ নং কড়ইয়া ইউনিয়নে ৩৪৮ জন জবকার্ডধারী উপকারভোগী রয়েছে।৩৪৮ জন উপকারভোগীর বিপরীতে এই ইউনিয়নে প্রকল্প রয়েছে ৯ টি। প্রকল্পের বাজেট বরাদ্দ বিশ্লেষণে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।তবে প্রকল্পের নন ওয়েজ কস্ট খাতের টাকা কোথায় কিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

অনুসন্ধানকালে দেখা গেছে,কড়ইয়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের আকানিয়া উত্তর পাড়া জসিমের বাড়ি হতে তালুকদার বাড়ি হয়ে হাশেম মাস্টারের বাড়ির পশ্চিম পাশের রাস্তা পুনঃনির্মাণ প্রকল্পে প্রায় একশো মিটার পর্যন্ত মাটির কাজ করা হয়েছে। এ প্রকল্পে ৪৬ জন জবকার্ডধারী উপকারভোগী রয়েছে।ইজিপিপি নির্দেশনা অনুযায়ী ৭ জানুয়ারি প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ শেষ না করেই উপজেলার প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে অর্থ আত্মসাতের পায়তারার অভিযোগ উঠেছে ইউপি সদস্য মোঃ কামরুজ্জামান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে।সম্প্রতি কামরুজ্জামান কাঞ্চনের বিরুদ্ধে গ্রামীণ রাস্তা পাকাকরণ প্রকল্পে নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে অর্থ আত্মসাতের পায়তারা করারও অভিযোগ উঠে।৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামরুজ্জামান কাঞ্চন প্রকল্পের তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে বলেন,’আকানিয়া জমির উদ্দিন হাজী বাড়ি থেকে মৌলভী সাহেবের বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণ প্রকল্প রয়েছে। সেখানে উপকারভোগী রয়েছে ৪৬ জন।
ইউনিয়নের প্রকল্প তালিকা অনুয়ায়ী আকানিয়া উত্তর পাড়া জসিমের বাড়ি হতে তালুকদার বাড়ি হয়ে হাশেম মাস্টারের বাড়ির পশ্চিম পাশের রাস্তা পুনঃনির্মাণ প্রকল্প নামে ইজিপিপি প্রকল্প থাকলেও কাঞ্চন মেম্বার সে বিষয়ে কোন কথা বলতে চাননি।তবে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাত করতে ভুয়া একটি প্রকল্পের নাম বলেছেন এ প্রতিনিধিকে।অনুসন্ধানকালে আরও জানা গেছে,ইউপি সদস্য কাঞ্চন মিথ্যা তথ্য দিয়েই প্রকল্পের ৪৬ জন উপকারভোগী জবকার্ডধারীর প্রায় ৭ লাখ ১৬ হাজার টাকা আত্মসাতের পায়তারা করছেন। প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে কাজ না করেই প্রকল্পের অর্থ আত্মসাত করতেই নামসর্বস্ব ভুয়া প্রকল্পের কথা বলছেন।এমন অভিযোগ প্রকল্প এলাকায় বসবাসরত স্থানীয় বাসিন্দাদের।

প্রকল্প এলাকায় বসবাসকারী স্থানীয়দের অভিযোগ,রাস্তার কারণে ছেলে-মেয়েদের বিয়েশাদি পর্যন্ত হচ্ছে না। প্রতিবছরই রাস্তা করার আশ্বাস দিয়ে কাঞ্চন মেম্বার আর রাস্তার কাজ করছেন না। কোনও প্রকল্প এলাকায় এগারো বছরের মধ্যে কোনও সাইনবোর্ড পর্যন্ত লাগায়নি ইউপি সদস্য কাঞ্চন।



কচুয়ার কড়ইয়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের আকানিয়া উত্তর পাড়া হাশেম মাস্টারের বাড়ির পশ্চিম পাশের রাস্তা পুনঃনির্মাণ প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি।

সূত্রমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ইজিপিপি প্রকল্পের প্রভার্টি ইনডেক্স অনুযায়ী, এ ক্যাটেগরিতে থাকা কচুয়ার ৯ নং কড়ইয়া ইউনিয়নে দারিদ্র্যের হার ৪০ দশমিক ২০ ভাগ উল্লেখ থাকলেও রহস্যজনক কারণে তালিকা থেকে বাদ পড়েছে অধিকাংশ দরিদ্র মানুষ।এতে নামমাত্র কাগজে কলমে উপকারভোগী থাকলেও প্রকৃত অসহায় দিনমজুর মানুষজন প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

প্রকল্পে বরাদ্দকৃত টাকা পরিশোধে সংশ্লিষ্ট উপজেলা ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিকে দাখিলকৃত উপকারভোগীদের মোবাইল নম্বর-সংবলিত তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের নিয়ম থাকলেও স্বজনপ্রীতি আর অনিয়মের কারণে কেউই তালিকা যাচাই-বাছাই করছেন না। বিগত সময়ে সিমকার্ডধারী উপকারভোগীদের মোবাইলে টাকা আসার পর সেই টাকা কৌশলে উত্তোলন করে সামান্য কিছু টাকা তাদের দিয়ে প্রকল্পের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠে দুই ইউপি সদস্যদের বিরুদ্ধে। উপকারভোগীদের সিমকার্ড নিজেদের কাছে রেখে পাঁচশত টাকায় বাহিরের শ্রমিক দিয়ে প্রকল্পের নামমাত্র কাজ করে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠলেও অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।এমন অভিযোগ ৬ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের। তবে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের পায়তারার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা,ইঞ্জিনিয়ার,ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রকল্পের সভাপতির যোগসাজশ থাকতে পারে বলে ক্রাইম রিপোর্টের অনুসন্ধানে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে।

প্রকল্পে কাজ না হওয়ার ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবদুছ সালাম সওদাগর বলেন,”প্রকল্পের কাজ সব সমন্বয় করে ইউপি সদস্য কামরুজ্জামান কাঞ্চন। আপনারা চাঁদপুর থেকে এসে এত কিছু কেন দেখেন?কচুয়াতেও তো সংবাদিক আছে ওদের সাথে আমরা কথা বলবো।”

 

 

Comments are closed.

More News Of This Category