রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাজীগঞ্জে মডেল মসজিদ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

বিশেষ প্রতিনিধি,চাঁদপুর

চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।শুরু থেকেই ঠিকাদার নিন্মমানের মরিচিকাযুক্ত পুরাতন ষ্টীল ব্যবহার করে তৃতীয় তলা বিশিষ্ট অবকাঠামো নির্মাণের অভিযোগ উঠলেও সংশ্লিষ্টরা কোনো পদক্ষেপ নেননি।চুক্তিমূল্যের শর্ত অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তিন বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও প্রকল্পটির কাজ এখনও শেষ হয়নি ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে।কাজ শেষ না করেই ইতোমধ্যে মহাধুমধামে প্রকল্পটি উদ্ভোধন করা হয়েছে।এ যেন অনিয়মই নিয়ম!

সূত্রমতে,বাংলাদেশের জেলা ও উপজেলায় ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন (উপ শিরোনাম: চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলায় সকল সিভিল, স্যানিটারি, বৈদ্যুতিক ও শোভাকর কাজ সহ তৃতীয় তলা বিশিষ্ট মসজিদ ভবন এবং তৃতীয় তলা বিশিষ্ট ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের মে মাসে। প্রত্যাশী সংস্থা ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও চাঁদপুর গণপূর্ত বিভাগ প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করে।এসএ এবি এমআরএল নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের কাজ পায়।
যার দরপত্র নং( chandpur/dev/masjid 18-19 date:18-03-2019 দরপত্র পরিচিতি নং -297127,চুক্তিপত্র নম্বর -57 of 2018-2019।

চুক্তিমূল্য অনুযায়ী ১১ কোটি ৬৫ লাখ ৫৭ হাজার ৭৬৮টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।বিভিন্ন অযুহাত তুলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে কাজ সমাপ্ত করতে পারেনি।ফলে আরেক দফা কাজ সমাপ্তির তারিখ নির্ধারণ করা হয় ২০২২ সালের আগষ্ট মাস পর্যন্ত।দ্বিতীয় দফা সময় বৃদ্ধির পরও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ,ইলেকট্রিক,স্যানিটারি সহ অন্যান্য কাজ শতভাগ শেষ করতে পারেননি।আবারও তৃতীয় দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়।অভিযোগ রয়েছে,মাত্র চার সাত আট জন শ্রমিক দিয়েই এই প্রকল্পের কাজ শুরু করেন ঠিকাদার।তবে অভিযোগের ভিত্তি নেই বলে করোনা সহ প্রস্তাবিত প্রকল্পস্থলে গর্ত ভরাটের ওজোড় দেন ঠিকাদার।এত ওজোড় অযুহাত অনিয়মের পরও অদ্যাবধি প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই ঠিকাদার নিজের মর্জিমাফিক মন্থরগতিতে কাজ করছেন।মানছেন না চুক্তিপত্রের কোনো নিয়মই!

অভিযোগ রয়েছে, মডেল মসজিদের ছাদ ঢালাইয়ের পুরুত্ব ৬ ইঞ্চি হওয়ার কথা থাকলেও ৫.৫ ইঞ্চি করা হয়েছে।এমনকি নিন্মমানের পাথর আর মরিচিকাযুক্ত কম পুরুত্বের ষ্টীল ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে কাজ শুরু করার পর থেকেই। জানালার গ্রিল ১২ মিমি ষ্টীলবার ব্যবহার করার কথা থাকলেও ১০ মিমি ফাঁপা গ্রিল ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। বর্তমানে সামনে চলমান কাজেও সিমেন্ট কম ব্যবহার করতে দেখা গেছে।এছাড়াও নিন্মমানের ক্যামিকেলে প্রস্তুতকৃত ইকো পার্কি টাইলস,ইলেকট্রিক সুইচ, ফিটিং সামগ্রীও নিন্মমানের ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে।

নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার সম্পর্কে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত আবদুল আজিজ মিয়াজী নামে এক ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়। আবদুল আজিজ নামের ঐ ব্যক্তির সাথে ফোনে কথা বলেন এ প্রতিবেদক।আবদুল আজিজ ক্রাইম রিপোর্টকে বলেন,”নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করেছি কে বলেছে?নিন্মমানের কোনো জিনিস আমরা ব্যবহার করিনি।যা করছি সবই ঠিক আছে।এসব অভিযোগ সত্য নয়।আমি আপনার সাথে আর কোনো কথা বলতে চাই না। আপনার কোনো কথা থাকলে চাঁদপুর গণপূর্ত অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টদের সাথে বলেন।আপনার সাথে কেনো কথা বলবো?”
চুক্তিপত্রের শর্ত অনুযায়ী কাজ কেন নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি?এমন এক প্রশ্নের জবাবে আবদুল আজিজ বলেন,”বিভিন্ন সমস্যা ছিলো তাই কাজ শেষ হয়নি।এতো কথা আপনাকে কেন বলব? আপনি কেন জানতে চাইবেন? আপনি গণপূর্ত বিভাগে কথা বলেন।

কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই মরিচিকাযুক্ত কম পুরুত্বের ষ্টীল সহ নিন্মমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুল আজিজ নামের ঐ ব্যক্তি মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাঁদপুর গণপূর্ত সংশ্লিষ্টদের ফোন করা হলে কেউ ফোন রিসিভ করেননি।

Comments are closed.

More News Of This Category