মঙ্গলবার, ২৪শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ১০ই আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তীব্র গরমে জনজীবনে দুর্ভোগ, বাড়ছে জ্বর-ডায়রিয়া

তীব্র গরমে দুর্ভোগ নেমে এসেছে জনজীবনে। গরমে বাড়ছে জ্বর, ডায়রিয়াসহ নানা রোগ। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা।

রাজশাহীর উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি তাপদাহ। অতিষ্ঠ জনজীবন। গরমে খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট হচ্ছে বেশি। জ্বর, ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। গরম এলেই ডায়রিয়ার সমস্যা মারাত্মক আকার ধারণ করে। বিশেষ করে শিশু-কিশোররা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।

রিক্সাচালক সালেক মিয়া বলেন, আর পারছি না। খুব গরম। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই একটু বিশ্রাম নিচ্ছি।

ফুটপাতে তরমুজ বিক্রেতা আকবর বলেন, ভাল গরম পড়ছে, ঈদের কারণে রাস্তায় মানুষ কম। তবে বেচা বিক্রি একবোরে খরাপ না। তবে গরমে তরমুজের দাম আরও বাড়বে।

বুধবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সরেজমিনে দেখা যায়, গরমে অনেক শিশু ডায়রিয়া, হাঁপানি ও জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। ভর্তির পাশাপাশি হাসপাতালের আউটডোরে রোগীদের ভিড় দেখা গেছে।

এক সপ্তাহে অস্বাভাবিকহারে বেড়েছে ডায়রিয়া ও নিমোনিয়া রোগি। এরইমধ্যে রোগীর চাপে রামেক হাসপাতালের ওয়ার্ডে ডায়রিয়া রোগির জন্য শয্যা সংখ্যা সংকুলান দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে। ফলে অনেকে বাধ্য হয়ে ওয়ার্ডের বাইরের মেঝেতে থাকছেন রোগিরা।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, গত ২৪ ঘন্টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ৪৭ জন গরমজনিত রোগি ভর্তি রয়েছে। যারমধ্যে ৩২ জনই শিশু। যাদের অধিকাংশই ডায়েরিয়া ও নিমোনিয়ায় আক্রান্ত।

নওগাঁর মান্দা থেকে আসা আব্দুর রহমান মেয়েকে রামেক হাসপাতালের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভর্তি করেছেন, তিনি গণমাধ্যমকে জানান, গত পাঁচদিন ধরে ৪২ দিনের শিশুর পাতলা পায়খানা জ্বর। পরে হাসপাতালে এসে জানতে পারে শিশুটির নিউমোনিয়া হয়েছে।

নাতিকে নিয়ে হাসাপাতালে এসেছেন পারুল আখতার। তিনদিন ধরে পাতলা পায়খানা, বমি এবং জ্বর ভুগছে তার নাতি। শয্যা না থাকায় হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

রামেক হাসপাতালের ইনচার্জ ডা. শংকর কে বিশ্বাস গণমাধ্যমকে জানান, এখনো হাসপাতালে রোগির পরিমাণ সহনীয় পর্যায়ে আছে। আবহাওয়া পরিবর্তন হয়ে গরম পড়ায় বিভিন্ন রোগে শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। এখন গরম যত বাড়ছে, ডায়রিয়া রোগিও তত বাড়ছে। এক্ষেত্রে পানি ও তরল জাতীয় খাবার খওয়ার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসকের।

এদিকে বুধবার দেশের বিভিন্ন স্থানে দিনের তাপমাত্রা আরও কিছুটা বেড়েছে। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পার হয়ে দেশের ছয় জেলায় বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। তবে ঝড়-বৃষ্টির কারণে দু-এক জায়গায় কিছুটা কমেছে তাপমাত্রা।

ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রাম বিভাগ ছাড়া দেশের বাকি ছয় বিভাগে তাপপ্রবাহ বইছে। দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলেই গরম তীব্র আকার ধারণ করেছে। গরমে চরম আকার ধারণ করেছে দুর্ভোগ। এখন বাতাসে আর্দ্রতা বাড়ছে, যা অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

তবে ঢাকায় তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। বুধবার বিকেলে রাজধানীর কোথাও কোথাও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে কমে হয়েছে ৩৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে ঢাকায় অস্বস্তিকর অনুভূতি কমেনি।

চট্টগ্রাম বিভাগের বেশিরভাগ অঞ্চল থেকে তাপপ্রবাহ দূর হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।

বুধবার (১৭ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল চুয়াডাঙ্গায়। এছাড়া তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাওয়া রাজশাহীতে ৪০ দশমিক ৪, পাবনার ঈশ্বরদীতে ৪০ দশমিক ৫, যশোরে ৪০ দশমিক ২, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

Comments are closed.

More News Of This Category