শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিত্যপণ্যের বাজারে অস্বস্তিতে ক্রেতা

ক্রাইম রিপোর্ট ডেস্ক


নিত্যপণ্যের বাজার দীর্ঘদিন ধরেই ঊর্ধ্বমুখী। আর রমজান আসার পর থেকে যেন নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে। মাঝে মধ্যে দাম কিছুটা কমলেও কয়েক দিনের ব্যবধানেই তা আগের অবস্থায় ফিরে যায়। সরকার দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির লাগাম টানার কথা বললেও বাস্তবে এর প্রতিফলন সামান্যই। রমজান মাসেও খুব একটা পাল্টায়নি বাজারের পরিস্থিতি। প্রায় সব ধরনের পণ্যই বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। জিনিসপত্রের লাগামহীন দামে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঊর্ধ্বমুখী দামে মানুষ আজ দিশাহারা।

রাজধানীর মিরপুর-১ নম্বরের কাঁচাবাজার ঘুরে গতকাল দেখা যায়, রমজানের আগে গত সপ্তাহে সবজিসহ মুদি দোকানের পণ্য যে দামে বিক্রি হচ্ছিল, আজকেও তা অপরিবর্তিত। এসবের মধ্যে অল্প কিছু পণ্যের দাম কিছুটা কমেছে, আবার কিছু পণ্যের বেড়েছে। রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কথা সরকার বললেও প্রকৃতপক্ষে বাজারে এর প্রতিফলন সামান্যই। রোজা শুরুর আগের বাড়তি দাম আরও বাড়তির দিকেই যাচ্ছে।

গতকাল বাজারে প্রতিকেজি শিম ৬০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, টক টমেটো ৮০ টাকা, সাদা মুলা ৫০ টাকা, দেশি গাজর ৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৮০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৮০ টাকা, শসা ৭০-৮০ টাকা, খিরাই ৬০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, করলা ১৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ো ৩০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৮০-৯০ টাকা, পটোল ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর লতি ১০০-১২০ টাকা, সজনে ২০০ টাকা, কচুরমুখি ১২০ টাকা, কাঁচা মরিচ ৮০ টাকা, ধনেপাতা ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৭০-১০০ টাকা, ফুলকপি ৬০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা করে বিক্রি হতে দেখা যায়। এছাড়া প্রতি হালি লেবু বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা করে। এক্ষেত্রে দেখা যায় করলা, পটল, ঢ্যাঁড়স, কাঁচা মরিচের দাম কমেছে। আর গাজর, টমেটো, খিরাই, ফুলকপির দাম বেড়েছে। এছাড়া অন্যান্য জিনিসের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।


এছাড়া গতকাল মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ৯০-১১০ টাকা, লাল ও সাদা আলু ৩৫-৪০ টাকা, নতুন দেশি রসুন ১৫০ টাকা, চায়না রসুন ২০০ টাকা, ভারতীয় আদা ২২০, চায়না আদা ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে গত সপ্তাহের তুলনায় পেঁয়াজের দাম কমেছে ১০-২০ টাকা এবং আলুর দাম বেড়েছে আরও ৫ টাকা।

বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী শায়েলা শারমিন বলেন, আমরা আর কতদিন এভাবে চলব জানি না।আমাদের খাবারের খরচ দিন দিন বেড়েই চলছে। বেতন পাই কত টাকা আর খরচ করি কত টাকা। দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে তো আর বেতন বাড়ে না। ভবিষ্যতে কী হবে জানি না।

আগে থেকেই তো দাম বাড়তি। রোজার মধ্যেও শান্তি নেই। বাজারে কোন জিনিসটার দাম কম কেউ কী বলতে পারবে? যেই সবজিই কিনতে যাই দাম বলে ৮০ টাকা না হয় ১০০ টাকা। আমাদের কী করার আছে? নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে এমনটাই বলছিলেন বাজার করতে আসা আরেক ক্রেতা আলাউদ্দিন আলাল।

এদিকে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানায়, জিনিসপত্রের দাম কিছুটা বেশি আছে আপাতত। তবে শিগগিরই দাম কমে যাবে। আলু-পেঁয়াজ বিক্রেতা হানিফ বলেন, গতকাল পেঁয়াজের দাম কমেছে, তবে আলুর দাম বেড়েছে। আলুর দাম বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, আমার মনে হচ্ছে আলুর দাম আরও বাড়তে পারে।

আলু কিনতে এসে বেলাল হোসাইন বলেন, আলুর দাম আস্তে-ধীরে আবার বাড়তে শুরু করেছে। ৩০ টাকার আলু আজকে ৪০ টাকায় কিনেছি। এদিকে গতকাল মুদি দোকানের পণ্যের দামও ছিল অপরিবর্তিত। তবে এক লাফে ৪৫ টাকা বেড়ে গেছে খেসারির ডালের দাম। গতকাল ছোট মসুরের ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মসুরের ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৬০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৮০ টাকা, খেসারি ডাল ১৬০ টাকা, বুটের ডাল ১১৫ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা দরে বিক্রি হয়। এক্ষেত্রে দেখা যায়, গত সপ্তাহে খেসারির ডাল ছিল ১১৫ টাকা কেজি, গতকাল তা হয়েছে ১৬০ টাকা কেজি।

আব্রার স্টোরের বিক্রেতা মো.সুরুজ বলেন, খেসারি ডাল এখন বাজারে পাওয়া যায় না বললেই চলে। আর এই ঘাটতির কারণেই দাম বেড়ে গেছে। এছাড়া মুদি দোকানের অন্যান্য পণ্যের দাম ছিল অপরিবর্তিত। গতকাল প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৩ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৯ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা, খোলা চিনি ১৪০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়।

এছাড়া গতকাল বাজারে ইলিশ মাছ আকার ভেদে প্রতিকেজি ১৮০০-২২০০ টাকা, রুই মাছ ৩৮০-৬০০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৭০০ টাকা, কালিবাউশ ৪৫০-৮০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৬০০-১৪০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪০০ টাকা, কই মাছ ৬০০-৮০০ টাকা, পাবদা মাছ ৫০০-৭০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০-১৩০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০-৭০০ টাকা, বেলে মাছ ১২০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৭০০-১০০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ১০০০-১২০০ টাকা, শোল মাছ ৭০০-৮০০ টাকা, কাজলী ১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

গতকাল ব্রয়লার মুরগি ২০০-২১৫ টাকা, কক মুরগি ২৯০-৩০০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৯০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। মুরগির লাল ডিম ১৩৫ টাকা এবং সাদা ডিম ১২৫ টাকা ডজন দরে বিক্রি হয়।

Comments are closed.

More News Of This Category