সোমবার, ২৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চাঁদপুরে নৌকার বিপক্ষে লড়বেন হেভিওয়েট প্রার্থীরা ত্যাগী নেতাদের ভরসা নেই নৌকায়!

বিশেষ প্রতিবেদক,চাঁদপুর


আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে চাঁদপুরের ৫ টি আসনে প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে।মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাইছেন প্রার্থীরা।ভোটের হিসেব নিকেশ নিয়ে চলছে ভোটারদের মাঝে নানামুখী বিশ্লেষণ। হাট-বাজার থেকে শুরু করে চায়ের দোকান সর্বত্রই এখন চলছে ভোটের আলাপ।অধিকাংশ আসনেই রয়েছে দলীয় কোন্দল।নেতা কর্মীদের মান- অভিমানে কোথাও কোথাও বঞ্চিত নেতাকর্মীরা হাটছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীদের গণসংযোগের প্রচারণায়।

আগামী ৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চাঁদপুরে ৫টি আসনে ভোটের লড়াইয়ে মাঠে ২৯জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দীতা করবেন। তবে চাঁদপুরের সবকটি আসনে নৌকার পুরনো মাঝিদের উপর খুব একটা ভরসা নেই আওয়ামীলীগ সমর্থিত নেতাকর্মী ও ভোটারদের।

চাঁদপুর জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ হালনাগাদ ভোটার তালিকায় জেলার ৫ আসনে ৮৯ টি ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ২১ লাখ ৫৬ হাজার ৬০৯ জন। এর মধ্যে ১০ লাখ ৪৪ হাজার ৩২ জন মহিলা ভোটার।মোট ভোটারের অর্ধেক মহিলা ভোটার। পুরুষ ভোটার রয়েছে ১১ লাখ ১২ হাজার ৫৭৭ জন।


 


চাঁদপুর- ১ (কচুয়া): আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩২৫৭৫৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৬৯৩৩১ জন, নারী ভোটার ১৫৬৪২৮ জন।
চাঁদপুর-১ আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামীলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ।
এ আসন থেকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ড. সেলিম মাহমুদ (নৌকা), মার্কার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর মনোনীত প্রার্থী মো. সেলিম প্রধান (চেয়ার),মশাল প্রতীক নিয়ে লড়বেন জাসদ মনোনীত প্রার্থী সাইফুল ইসলাম। এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রার্থী ৩ জন। এদের কেউই এর আগে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হননি। সুতরাং, ভোটাররা যাকেই নির্বাচিত করুক না কেন, এখানে একজন নতুন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন।তবে এ আসনে হেভিওয়েট কোনো প্রার্থী না থাকায় নৌকার প্রার্থী সেলিম মাহমুদ রয়েছেন জনপ্রিয়তার শীর্ষে।

চাঁদপুর- ২ (মতলব দক্ষিন ও মতলব উত্তর) আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪৬৭২২৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২৩৮৬৩৪ জন এবং নারী ভোটার ২২৮৫৯৪ জন। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীর বিক্রম। এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন
জাতীয় পার্টির এমরান হোসেন মিয়া (লাঙ্গল), সুপ্রিম পার্টির মোহাম্মদ মনির হোসেন বেপারী (একতারা), স্বতন্ত্র এম. ইসফাক আহসান (ঈগল), জাসদের মোহাম্মদ হাছান আলী শিকদার (মশাল) প্রতীকে।এই আসনে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জনপ্রিয়তায় এগিয়ে রয়েছেন।

চাঁদপুর-৩ (চাঁদপুর সদর-হাইমচর): এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৫,০৮,৯৩২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২,৬৩,৮৯৩ জন । নারী ভোটার ২,৪৫,০৩৯ জন। চাঁদপুর-৩ আসনটি বিভিন্ন কারণে বেশ আলোচিত। চাঁদপুর-৩ আসন থেকে গত তিন বারের নির্বাচিত এমপি ডা. দীপু মনি। তবে এই আসনে আওয়ামী লীগের একচ্ছত্র আধিপত্য আছে বলা যাবে না। কারণ এর আগে ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরাই জয়লাভ করেছিল। ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আলম খান এবং ৭ম ও ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জি এম ফজলুল হক জয়লাভ করেন। ২০০৮ সালে ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতে এই আসনে বিএনপির আধিপত্য ইতি টানেন ডা. দীপু মনি। ওই নির্বাচনে ডা. দীপু মনি পান ১৩৪৮৩৬টি ভোট আর তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির জি এম ফজলুল হক ১১৬০৬৮টি ভোট। প্রায় ২০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন বিএনপি প্রার্থী। তবে এই আসনেও এবার দলীয় কোন্দল প্রকট।এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের ডা. দীপু মনি (নৌকা), মার্কার বিপরীতে ভোটে লড়বেন স্বতন্ত্র ড. মোহাম্মদ শামসুল হক ভূঁইয়া (ঈগল), মো. রেদওয়ান খান (ট্রাক), জাতীয় পার্টির মো. মহসীন খান (লাঙ্গল), বাংলাদেশ ইসলামিক ফ্রন্টের আবু জাফর মো. মাঈনুদ্দিন (মোমবাতি), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মো: মিজানুর রহমান পেয়েছেন (ফুলের মালা), জাকের পার্টির মোঃ. কাওছার মোল্লা (গোলাপ ফুল) প্রতীক নিয়ে।

চাঁদপুর -৪ (ফরিদগঞ্জ ) আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩,৬৯,১২৯ জন । পুরুষ ভোটার হচ্ছে ১,৯২,৭৬৮ জন। নারী ভোটার হচ্ছে ১,৭৬,৩৬১ জন। চাঁদপুর জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ আসন।এ আসনটিতে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় ভোটার সংখ্যাও বেশি। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ক্রমশ জমে উঠছে নির্বাচনী হাওয়া। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এ আসনটি বেশিরভাগ সময় বিএনপির দখলে থাকলেও ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার মধ্যদিয়ে আসনটি হাতছাড়া হয়ে আ’লীগের দখলে চলে যায়। মূলত এ আসনটিতে বিএনপির বড় অঙ্কের ভোট ব্যাংক। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এ আসনটিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। বিএনপির দুর্গে হানা দিয়ে এখন আসনটিতে আওয়ামী লীগ শক্ত অবস্থান সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় প্রেসক্লাবের তৎকালীন সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুহম্মদ শফিকুর রহমান বিএনপির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য লায়ন হারুন-অর রশিদকে হারিয়ে এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবারও তিনি নৌকার প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতা করবেন।এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সাংবাদিক মুহম্মদ শফিকুর রহমান (নৌকা), সঙ্গে হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন ড. মোহাম্মদ শামসুল হক ভূঁইয়া(ঈগল), জালাল আহমেদ (ট্রাক), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আব্দুল গনি (আম), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের বাকী বিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী (ফুলের মালা), তৃণমূল বিএনপি’র মোঃ আব্দুল কাদের (সোনালী আঁশ), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম) ড. মুহাম্মদ শাহজাহান (নোঙর), জাতীয় পার্টির সাজ্জাদ রশিদ (লাঙ্গল) প্রতীক নিয়ে।

চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি): এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ৪,৮৫,৫৬১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার হচ্ছে ২,৪৭,৯৫১ জন, নারী ভোটার ২,৩৭,৬১০ জন। এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের ১ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম পরপর তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মেজর (অব.) রফিকুল ইসলামের (নৌকা) প্রতীকের সাথে স্বতন্ত্র হেভিওয়েট প্রার্থী গাজী মো. মাঈনুদ্দিন (ঈগল), মো. শফিকুল আলম (ট্রাক), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মোজাদ্দেদী (চেয়ার), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের এর বাকী বিল্লাহ মিশকাত চৌধুরী (ফুলের মালা), বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের আক্তার হোসেন (ছড়ি) প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।তবে এ আসনে ত্যাগী নেতা কর্মীদের মূল্যায়ন না করার অভিযোগ দলীয় নেতাকর্মীদের।যার কারণে বর্তমানে হাজীগঞ্জ শাহরাস্তি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সহ ত্যাগী নেতাকর্মীরা নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান করছেন।এখানে জনপ্রিয়তায় সবার শীর্ষে রয়েছেন ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী মোঃ মাঈনুদ্দিন। এরপর রয়েছেন ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সফিকুল আলম। দলীয় কোন্দল আর নেতাকর্মীদের অসন্তোষের কারণে এ আসনে নৌকার বিজয়ে অনেকটা অনিশ্চয়তা রয়েছে।তবে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় মেজর (অব.)রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম এর নাম চির স্বরণীয় হয়ে থাকবে এ আসনে।

উল্লেখ্য চাঁদপুরের পাঁচটি আসনে ৮ উপজেলায় ভোট কেন্দ্র রয়েছে ৭ শতাধিক।এর মধ্যে চাঁদপুর-১ (কচুয়া) -১০৯ টি, চাঁদপুর-২ (মতলব দক্ষিণ ও উত্তরে) ১৫৫ টি, চাঁদপুর-৩ (চাঁদপুর সদর ও হাইমচরে)-১৬৫ টি, চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জে)-১১৮ ও চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তিতে) ১৫৩টি ভোট কেন্দ্রে রয়েছে। এই জেলায় ২০০৯, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নবম, দশম ও একাদশ সংসদীয় নির্বাচনে সব আসনেই নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান ক্ষমতসীল আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্যরা।তবে এবার ভোটের পালে উল্টো হাওয়া লাগতে পারে বলে ধারণা করছেন ত্যাগী নেতাকর্মীরা।

Comments are closed.

More News Of This Category