শনিবার, ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শাহরাস্তিতে জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধে হাতাহাতি,মামলা

 

বিশেষ প্রতিনিধি,চাঁদপুর


চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ইউপি চেয়ারম্যানসহ অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে শাহরাস্তি মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি উপজেলার মেহের উত্তর ইউনিয়নের বানিয়াচোঁ গ্রামে সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এই ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে,উপজেলার মেহের উত্তর ইউনিয়নের বানিয়াচোঁ মজুমদার বাড়ীর সম্পর্কের চাচা মো. সেলিম মজুমদারকে (৫০)কে মারধরের অভিযোগ এনে একই বাড়ির ভাতিজা ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন তাঁর চাচী ফরিদা ইয়াসমিন। এঘটনায় এলাকায় এজাহারভুক্ত ৪ জন সহ অজ্ঞাতনামা আরও ৭/৮ জনকে আসামী করা হয়। মামলা নং -২, তারিখ ৪/২/২০২৪।মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন শাহরাস্তি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন।
মামলার বিবাদীরা হলেন-মো. জহিরুল ইসলাম (৩৫) মো. মনির হোসেন (৪৫) সাইফুল ইসলাম (৩০)ও খোরশেদ আলম (৬০) সহ অজ্ঞাত ৭/৮ জন।
এজাহার সূত্রে,বাদী- বিবাদী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মূলত বাদী বিবাদীর মধ্যে পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত বিরোধ চলে আসছে। সম্পত্তির বিরোধ সংক্রান্ত একাধিক মামলাও রয়েছে আদালতে।উভয়ের সম্পত্তি বিএস খতিয়ানে ভুলভাবে লিপিবদ্ধ হওয়ায় আপোষ মিমাংসার স্বার্থে উভয়ের সম্মতিতেই বিএস খতিয়ান সংশোধনীর জন্য আদালতে মামলা করা হয়। পরবর্তীতে বাদী- বিবাদী ছাড়াও অন্য একটি পক্ষকে ওয়ারিশসূত্রে মামলায় পক্ষ করা হয়। আদালতে মামলার কোনো সূরাহা না হলেও মামলার বাদীর স্বামী সেলিম মজুমদার অপর পক্ষের সাথে সম্পত্তির বিরোধ সংক্রান্ত কোন আপোষ মিমাংসা না করে ওয়ারিশদের সাথে গোপনে রফাদফা করে কয়েকটি দলিল সৃজন করার অভিযোগ উঠে।দলিল সৃজনের পর মামলার বিবাদী চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম গংদের যুগের পর যুগ ধরে ভোগদখলকৃত জায়গা দখলে নেয়ার চেষ্টা করেন চাচা সেলিম মজুমদার।এতেই দু’পক্ষের মাঝে বিরোধের সূত্রপাত হয়।

এরই সূত্র ধরে ঘটনার দিন বিকালে ইউপি কার্যালয়ের সামনে চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলামের পিতা মো: খোরশেদ আলমকে ধাক্কা দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন চেয়ারম্যানের চাচা সেলিম মজুমদার।গালিগালাজের একপর্যায়ে সেখানে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয় উভয়ের মাঝে।একপর্যায়ে চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম তাঁর চাচাকে সেখানে বসে থাকা চেয়ার থেকে উঠে বাসায় যেতে বলেন।এতে তিনি ক্ষিপ্ত হন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

এই ঘটনায় চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলামের চাচা সেখান থেকে উঠে গিয়ে নামাজ আদায় করেন।এরপর শাহরাস্তি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে ভর্তি হন।এ ঘটনা পরবর্তীতে মামলা পর্যন্ত গড়ায় বলে দাবি করেন চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম।

তবে বিরোধকৃত সম্পত্তিতে থাকা পল্লী বিদ্যুতের টাওয়ারের নীচে সম্পত্তির গাছ কাটার বিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের পিতা খোরশেদ আলমসহ পরিবারের লোকজন বাধা দেন এবং উভয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।
ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে প্রত্যক্ষদর্শী সহ এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে,ঐ দিন উভয়ের মধ্যে বাকবিতন্ডা কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি ঘটনা ঘটে। তবে সেখানে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
মামলার বাদী ফরিদা ইয়াছমিনকে  প্রশ্ন করা হয় আপনার স্বামীকে মামলায় উল্লেখিত ১২ আসামী একই সঙ্গে
মেরেছে? তিনি হ্যাঁ সূচক উত্তর দেন! কিন্তু তিনি ১২জনের মারধরের শিকার হয়ে কিভাবে ঘটনাস্থল বানিয়াচোঁ গ্রামের নিজ বাড়ীর সামনে দুই ঘন্টা অবস্থান করেন নামাজ পড়েন এবং এরপর হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হন? এসব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেননি  ফরিদা ইয়াসমিন।তবে বারবার মামলার বাদী সম্পত্তির বিরোধ প্রসঙ্গ টেনে আনেন।

মামলায় অভিযুক্ত প্রধান আসামী চেয়ারম্যান মো.জহিরুল ইসলাম এ প্রতিনিধিকে জানান, আমার আপন বাবা-চাচারা ৩ ভাই।আমাদের সম্পত্তিগত বিরোধ দীর্ঘ বছরের। এটি হয়েছে বিএস খতিয়ান সঠিক না থাকায়। আমার বাবা-চাচাদের মধ্যে ওয়ারিশদের সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধ আছে। আমার বাবার চাচাত ভাই সেলিম মজুমদার বিএস খতিয়ানের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আমরা তাঁর সঙ্গে মামলার পক্ষ হলেও উনার নিজ নামে অনেক সম্পত্তির দলিল সৃজন করেন। যেসব সম্পত্তি আমাদের দখলে আছে। আমার চাচা সেলিম মজুমদার বহিরাগত সন্ত্রাসি প্রকৃতির লোক দিয়ে সেসব সম্পত্তি দখল করতে কয়েকবার চেষ্টা করেন।এতে আমরা নিজেদের পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া জায়গা দখল করতে বারণ করি।
চেয়ারম্যান আরও বলেন,আমার বাবা একজন নিরীহ মানুষ।বাবার সাথেও চাচা সেলিম মজুমদার অনেক বার খারাপ আচরণ করেন।বয়সে ২০ বছরের বড় আমার বাবার গায়ে হাত পর্যন্ত তুলেছেন আমার চাচা সেলিম মজুমদার।সম্মানের কথা চিন্তা করে আমরা এসব ধামাচাপা দিয়ে রেখেছি। ঘটনার দিন আমি চাচাকে মারধর করিনি।আপনারা আমার অবর্তমানে এলাকার প্রত্যক্ষদর্শী মানুষদের সাথে কথা বলে খোঁজ নিয়ে দেখেন এমন কোন ঘটনা ঘটেনি সেখানে।

ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের।ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী পাশ্ববর্তী বাড়ির বাসিন্দা আজাদ বলেন,এখানে মারামারির কোনো ঘটনা ঘটেনি।অপর প্রত্যক্ষদর্শী অটো চালক জাহেদ বলেন,এখানে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে চাচা ভাতিজা দুদিকে চলে যায়।কোনো মারামারির ঘটনা ঘটেনি।তবে শুনেছি নামাজ পড়ে চেয়ারম্যানের চাচা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।কেন তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন জানিনা।

তবে এলাকায় গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, সেলিম মজুমদারের মেঝ ছেলে ৪১ তম বিসিএসে উত্তীর্ণ ‘প্রভাবশালী পূত্র’ এলাকার একটি স্বার্থান্বেষী কুচক্রী মহলের ইন্ধনে এসব ঘটনার কলকাঠি নাড়ছেন বাইরে থেকে।

শাহরাস্তি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা
(ওসি) মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, মামলাটি এফআইআর হয়েছে। তদন্ত করছেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) জনি কান্তি। মামলাটি
তদন্ত শেষ হলে এই বিষয়ে মন্তব্য করা যাবে।

Comments are closed.

More News Of This Category