মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাজীগঞ্জে ইজিপিপি প্রকল্পের কাজে শুভঙ্করের ফাঁকি ! 

বিশেষ প্রতিবেদক,চাঁদপুর

 দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাস্তবায়নাধীন অতি দরিদ্রদের জন্য আত্মকর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি) প্রকল্পে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে চাঁদপুর জেলার হাজীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কিছু জনপ্রতিনিধিসহ প্রকল্প-সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।এতে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির আওতাভুক্ত স্বল্পমেয়াদি কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দারিদ্র্য নিরসন ও দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাসের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের সুফল পাচ্ছে না প্রকল্পভুক্ত জবকার্ডধারী  উপকারভোগীরা।ফলে প্রকল্পের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন ভেস্তে যেতে বসেছে।তবে এ বিষয়ে বরাবরই নির্বিকার রয়েছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

সূত্রমতে,অতিদরিদ্রদের জন্য আত্মকর্মসংস্থান কর্মসূচি (ইজিপিপি)প্রকল্পের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম পর্যায়ের বাজেটে চাঁদপুর জেলায় ৮৯ টি ইউনিয়নের ১০ হাজার ৬০৫ জন উপকারভোগীর জন্য প্রকল্পে ৭৭লাখ ৮৪ হাজার টাকা নন ওয়েজ খাতে মঞ্জুরি প্রদান করা হয়। হাজীগঞ্জ উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে বরাদ্দ রয়েছে ১০ লাখ ৮০ হাজার ৪৬৮ টাকা।এরমধ্যে ৯ নং গন্ধব্যপুর উত্তর ইউনিয়নে ১৩২ জন জবকার্ডধারী উপকারভোগী রয়েছে।অপরদিকে হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নে রয়েছে ২০০জন জবকার্ডধারী উপকারভোগী।প্রকল্পের বাজেট বরাদ্দ বিশ্লেষণে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।তবে প্রকল্পের নন ওয়েজ খাতের টাকা কোথায় কিভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।


  শ্রমিকের কাজ চলছে এক্সাভেটর দিয়ে!


অপরদিকে ওয়েজ কস্ট খাতে চাঁদপুর জেলার ৮৯টি ইউনিয়নে মোট ওয়েজ কস্ট বরাদ্দ রয়েছে ১৭ কোটি ১লাখ দুই হাজার টাকা। এরমধ্যে হাজীগঞ্জ উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নে ওয়েজ কস্ট খাতে বরাদ্দ রয়েছে ২ কোটি ৩৭ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।কিন্তু সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন ও জেলা উপজেলার তথ্য বাতায়নে ইউনিয়নভিত্তিক প্রকল্প বরাদ্দের কোন তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।যদিও এসব তথ্য ওয়েবসাইটে থাকার কথা ছিলো। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও প্রকল্পের সভাপতি প্রকল্পে বরাদ্দকৃত টাকার বিষয়ে মুখ খুলছেন না।কোনো তথ্য দিতেও রাজি হননি। এমনকি প্রকল্প এলাকায় স্টীলের ফ্রেম সম্বলিত কোনো সাইনবোর্ড টানানো হচ্ছে না।এতে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে কতিপয় প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে শুভঙ্করের ফাঁকি’র অভিযোগ তুলছেন স্থানীয় সচেতন নাগরিকগণ।অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে শেয়ার বিজের অনুসন্ধানে।


অনুসন্ধানকালে প্রকল্পে এক্সাভেটর দিয়ে কাজ করে উপকারভোগীদের বঞ্চিত করার এমন শুভঙ্করের ফাঁকি’র সত্যতা পাওয়া গেছে হাজীগঞ্জ উপজেলার ৫ নং সদর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের সুবেদার রুহুল আমিন সড়কে।এই প্রকল্পে এক দিনেই এক্সাভেটর দিয়ে মাটি কেটেছেন স্থানীয় ইউপি মেম্বার মিজানুর রহমান।মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে বিগত দিনে ইজিপিপি’র সব কয়টি প্রকল্পে এক্সাভেটর দিয়ে মাটি কেটে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠে। অপরদিকে হাজীগঞ্জ উপজেলার ৯ নং গন্ধব্যপুর ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের মোহাম্মদপুর রাজ্জাকের বাড়ি হইতে কামালের দোকান পর্যন্ত রাস্তা পুনঃ নির্মাণ প্রকল্পে এক্সাভেটর দিয়ে কাজ শেষ করার সত্যতা পাওয়া গেছে।এক্সাভেটর দিয়ে কাজ শেষ করলেও ৩০ জন জবকার্ডধারীর তথ্যসম্বলিত একটি কপি এ প্রতিনিধির হাতে এসেছে।এক্সাভেটর দিয়ে কাজ করে ভূয়া জবকার্ডধারীদের নামে টাকা উত্তোলনের এমন অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে। প্রকল্পের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে জবকার্ডধারী নিন্ম আয়ের দরিদ্র মানুষদের নামমাত্র কাগজে -কলমে প্রকল্পের কাজে রেখে এক্সাভেটর দিয়ে মাটি কেটে উপকারভোগীদের শ্রমিক মজুরী আত্মসাতের পায়তারা করছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।
সূত্রমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ইজিপিপি প্রকল্পের প্রভার্টি ইনডেক্স অনুযায়ী, বি ক্যাটেগরিতে থাকা হাজীগঞ্জের ৯ নং গন্ধব্যপুর উত্তর ইউনিয়নে দারিদ্র্যের হার ৩৩ দশমিক ৩০ ভাগ উল্লেখ থাকলেও রহস্যজনক কারণে তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ১ নং ওয়ার্ডের অধিকাংশ দরিদ্র মানুষ। অপরদিকে প্রভার্টি ইনডেক্স অনুযায়ী, বি ক্যাটেগরিতে থাকা হাজীগঞ্জ সদর ইউনিয়নে দারিদ্রের হার ৩৩দশমিক ৩০ ভাগ উল্লেখ থাকলেও এক্সাভেটর দিয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করায় ২ নং ওয়ার্ডের জবকার্ডধারী উপকারভোগীরা প্রকল্পের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
প্রকল্পে বরাদ্দকৃত টাকা পরিশোধে সংশ্লিষ্ট উপজেলা ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটিকে দাখিলকৃত উপকারভোগীদের মোবাইল নম্বর-সংবলিত তালিকা যাচাই-বাছাইয়ের নিয়ম থাকলেও স্বজনপ্রীতি অনিয়মের কারণে কেউই তালিকা যাচাই-বাছাই করছে না। ফলে নামসর্বস্ব উপকারভোগীদের মোবাইলে টাকা আসার পর সেই টাকা কৌশলে উত্তোলন করার ঘটনা ঘটেছে বিগত সময়ে। টাকা উত্তোলন করার জন্য যাদের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে তাদের সামান্য কিছু টাকা দিয়ে প্রকল্পের অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে বিগত সময়ে। এতে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতে শুভঙ্করের ফাঁকি’র ঘটনা ঘটলেও অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কেউই এ প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে চাননি।

Comments are closed.

More News Of This Category