বৃহস্পতিবার, ৯ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাজীগঞ্জে প্রশিক্ষণ নিয়ে অর্ধশতাধিক নারী স্বাবলম্বী

 


উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক (আইজিএ)      প্রশিক্ষণ প্রকল্প


বেলায়েত সুমন


চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রশিক্ষণ প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অর্ধশতাধিক নারী উদ্যোক্তা স্বাবলম্বী হয়েছেন। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন “উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রশিক্ষণ” প্রকল্পের অধীনে ৪২৬ টি উপজেলায় ৯টি ট্রেডে দরিদ্র, সুবিধা বঞ্চিত মহিলাদের বিনামূল্যে আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ প্রদান করছে সরকার। এই প্রকল্পের আওতায় টেইলারিং, ব্লক বাটিক,বিউটিফিকেশন , ক্রিস্টাল শোপিচ ও ডেকোরেটেড মোমবাতি, মাশরুম চাষ, ভার্মি কম্পোষ্ট ও মৌচাষ, ফ্যাশন ডিজাইন, শতরঞ্জি ও হস্তশিল্প,সেলসম্যানশীপ ও ফ্রন্টডেক্স ম্যানেজমেন্ট, মোবাইল সার্ভিসিং এন্ড রিপেয়ারিং ও কম্পিউটার সার্ভিসিং এন্ড রিপেয়ারিং কোর্চে প্রতি উপজেলায় ২ টি ট্রেডে মোট ৫০ জন দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত নারীদের প্রশিক্ষণ দেয়ার নিয়ম রয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়ে হাল ধরেছেন পরিবারের। স্বপ্ন দেখছেন ব্যবসায়ের পরিধি বাড়িয়ে অন্যান্য সুবিধা বঞ্চিতদের কর্মের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে।

হাজীগঞ্জ উপজেলায় এই প্রকল্পের আওতায় ১১টি ব্যাচের মধ্যে ১ম -৫ম ব্যাচে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ২০ জনের গ্রুপে ২ টি ট্রেডে ২০০ জন। ৬ষ্ঠ -১০ম ব্যাচে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ২৫ জনের গ্রুপে ২ টি ট্রেডে ২৫০ জন এবং ১১তম ব্যাচে ২৫ জনের গ্রুপে ২ টি ট্রেডে ৫০ জন প্রশিক্ষণার্থী। হাজীগঞ্জ উপজেলায় এই প্রকল্পের আওতায় মোট ৫০০জন প্রশিক্ষণার্থীর মধ্যে এখন অর্ধশতাধিক দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত নারী উদ্যোক্তা সেলাই প্রশিক্ষণ ও ব্লক বাটিক ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

হাজীগঞ্জ উপজেলার ৫নং সদর ইউনিয়নের কাজিরগাঁও গ্রামের সাদেকা আক্তার সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত নারীরা সাদেকার কাছে সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ করে নিজেরাও স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। সেলাই কাজ করেই সংসারের হাল ধরেছেন সাদেকা।স্বামীর মৃত্যুর পর পরিবারের হাল ধরতে সাদেকা যখন কোনো উপায় খুঁজে পাননি তখন হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মির্জা শিউলি আক্তারের পরামর্শে এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নেন। আজ সাদেকা একজন সফল উদ্যোক্তা।

একই উপজেলার পৌর এলাকার কংগাইশ গ্রামের ফরিদা ইয়াসিন পারুল সেলাই কাজ শিখে বিভিন্ন জায়গা থেকে কাজের অর্ডার নিয়ে কাজ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। পাশাপাশি অন্যদেরও শেখাচ্ছেন সেলাই কাজ।পৌর এলাকার কংগাইশ গ্রামের আরেক সুবিধা বঞ্চিত নারী রোজিনা আক্তার।জীবনের সাথে যুদ্ধ করে সেলাই প্রশিক্ষণ নিয়ে বিভিন্ন বাসা বাড়ি থেকে সেলাইয়ের কাজ নিয়ে কাজ করছেন।বিক্রি করছেন কাপড়।ছোট্ট একটি দোকান দিয়ে আজ তিনি সফল উদ্যোক্তা।

হাজীগঞ্জ পৌর এলাকার মকিমাবাদের আরেক সফল উদ্যোক্তা জান্নাতুল ফেরদৌস। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ব্লক বাটিকের কাজ শিখে তিনি নিজেই এখন অন্যদের শিখিয়ে আয় করছেন। ব্লক বাটিকের বিভিন্ন ড্রেস তৈরি করে বিক্রি করছেন। ব্লক বাটিকের কাজ শেখার পরই জান্নাতুল ফেরদৌস এর জীবনের গল্প বদলে যায়। ব্লক বাটিক নিয়েই শুরু করেন টিকে থাকার লড়াই। মানুষের কোনো অবহেলাকে পাত্তা না দিয়ে শুরু করেন পুরোদমে ব্লক বাটিক নিয়ে কাজ। ব্যবসার পরিধি ধীরে বাড়তে থাকে। আজ তিনি ব্লক বাটিকের ব্যবসা করে স্বাবলম্বী ও একজন সফল উদ্যোক্তা।

আরেক সফল উদ্যোক্তা কামরুন নাহার।পৌর এলাকার বাসিন্দা। ঘরোয়া ভাবে ব্লক বাটিকের ব্যবসা করেন। এ ব্যবসা করে তিনিও সফল। শত প্রতিকূলতা আর নিজের ইচ্ছাশক্তির বলেই কামরুন নাহার আজ এ প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যবসা করে সফল ও স্বাবলম্বী।
পৌর এলাকার কংগাইশের আরেক সুবিধা বঞ্চিত নারী রীনা বেগম। স্বপ্ন দেখতেন সবসময় কিছু করার। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে নিজের গল্পটা বদলানোর। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ব্লক বাটিকের কাজ শিখে বদলে ফেলেন নিজের অসহায়ত্বের গল্পটা।ব্লক বাটিকের ব্যবসা করে আজ রীনা বেগম সফল। পরিবারের সদস্যদের মুখে ফুটাতে রাতদিন পরিশ্রম করে গেছেন। প্রত্যাশা ছিলো একদিন আলো আসবেই। আজ আর পেছনে তাকানোর সময় নেই রীনা বেগমের। নিজের কাজেই ব্যস্ত থাকেন সারাদিন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সুখেই আছেন।

এছাড়া উপজেলার কংগাইশের আকলিমা আক্তার,মুনহার আক্তার নয়ন মুসলিমা খাতুন রুমি, আলীগঞ্জের কুহিনুর আক্তার, সুবিদপুরের লাকি বেগম,টোরাগড়ের জেসমিন বেগম, আশ্রাফপুরের ইশরাত বেগম,সুহিলপুরের অপিরাণী দাস, ধেররার সোমা আক্তার, হোটনীর আয়েশা বেগম, পূর্ব কাজিরগাঁয়ের তানজিনা আক্তার,জাকনীর কুলসুমা আক্তার, খাকবাড়িয়ার জয়নব আক্তার সহ অর্ধশতাধিক দরিদ্র ও সুবিধা বঞ্চিত নারী উপজেলা পর্যায়ে মহিলাদের জন্য আয়বর্ধক (আইজিএ) প্রশিক্ষণ প্রকল্প থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সফল উদ্যোক্তা হয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

এ প্রকল্পের কর্মসূচি সম্পর্কে হাজীগঞ্জ উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সানজিদা মজুমদার বলেন, সুবিধা বঞ্চিত দরিদ্র নারীদের উন্নয়নের জন্য দরকার আত্মবিশ্বাস ও জেন্ডার-বিষয়ক সচেতনতা। এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যেমন অনেক নারী অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। আবার পেয়েছেন সামাজিক মর্যাদা। পাশাপাশি, তাঁরা অন্য নারীদেরও কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করছেন। উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন সুবিধাবঞ্চিত নারী এ প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ শিখে স্বাবলম্বী হচ্ছে নিজের বলার মত একটা গল্প তৈরি করছে ব্যাপারটা সত্যিই আনন্দের। আমি শুধু স্বচ্ছভাবে আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করছি। এ প্রকল্পের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন, অগ্রগতি উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। সুবিধাবঞ্চিত নারীগণ সুখের ঠিকানা খুঁজে পাচ্ছেন।

Comments are closed.

More News Of This Category