বিশেষ প্রতিবেদক
বর্তমানে প্রযুক্তির সহজলভ্যতার সুযোগ নিয়ে টেলিগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো জনপ্রিয় মেসেজিং অ্যাপগুলোকে ব্যবহার করে ভয়ংকর প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এই চক্রটি সাধারণ মানুষকে মোটা অঙ্কের আয় অনলাইন জব কিংবা বিভিন্ন লোভনীয় অফারের প্রলোভন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে।প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে অনেকেই প্রতারিত হয়েছেন অনুসন্ধানে উঠে আসে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রথমে একটি অচেনা নম্বর থেকে মেসেজ আসে—‘আপনি ঘরে বসে দৈনিক ৫০০-১০০০ টাকা আয় করতে চান?’ এই মেসেজের সঙ্গে থাকে একটি লিংক বা গাইডলাইন। কেউ কৌতূহলবশত যোগাযোগ করলেই শুরু হয় মূল প্রতারণা।প্রতারক চক্রটি প্রথমে নিরীহ ব্যবহারকারীদের নাম ও পরিচয় সংগ্রহ করে, এরপর বিভিন্ন কাজের নাম করে টাকা পাঠাতে বলে—যেমন অ্যাকাউন্ট খোলা, মেম্বারশিপ ফি, কিংবা প্রজেক্ট শুরু করার অগ্রিম খরচ। অনেক সময় নিজেদের পরিচয় দেয় আন্তর্জাতিক কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে।
চাঁদপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এরই মধ্যে এমন প্রতারণার শিকার হয়ে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন বহু মানুষ।কিন্তু লোকলজ্জার ভয়ে কেউই এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন না।
অনুসন্ধানকালে জানা গেছে,প্রথমেই হোয়াটসঅ্যাপে একটি ম্যাসেজ আসে।এরপর বলা হয় লিংকে গিয়ে টাস্ক সম্পন্ন করার কথা।লিংকে গেলে দেখা যায় ঢাকার একটি নামি-দামি রেস্টুরেন্টের রিভিউ দেয়ার অপশন। প্রথম রিভিউ দিলেই পাওয়া যায় ১২৬ টাকা।তাৎক্ষণিক প্রতারক চক্র এই টাকা বিকাশে পাঠিয়ে দেয়। এখান থেকেই প্রতারক চক্রের প্রতারণা শুরু।
এরপর লাইট অফ হোপ ভিআইপি- জিরো নাইন নামে টেলিগ্রামের একটি গ্রুপে সংযুক্ত করে প্রতারক চক্র।দ্বিতীয় ধাপে ষোল টাস্কের অফার করে প্রতারক চক্র। প্রথম টাস্কে ঢাকার নামি-দামি হোটেল রেস্টুরেন্টের ভুয়া রিভিউ দিলেই প্রতি রিভিউতে পঞ্চাশ টাকা হারে চারটি রিভিউ দিলে দুইশত টাকা সাথে সাথেই বিকাশ নম্বরে পাঠিয়ে দেয় প্রতারক চক্র। এরপর তৃতীয় ধাপে চারটি টাস্কে একই কাজ করলে একশো টাকা হারে চারশো টাকা পরিশোধ করে।তৃতীয় ধাপে প্রতি রিভিউতে দুইশো টাকা করে চারটি রিভিউ দিলে আটশো টাকা বিকাশে পাঠিয়েই শুরু হয় চতুর্থ ধাপ।
চতুর্থ ধাপে তিনটি টাস্ক সম্পন্ন করার পর একটি অপশন সামনে আসে। সেখানে বলা হয় ৪হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধ করলেই ৬ হাজার ৫০০ টাকা পরিশোধ করা হবে।একই সময়ে টাকা পরিশোধ করার শত শত ম্যাসেজ আসতে থাকে। মূহুর্তেই ৬ হাজার ৫০০ টাকা বিকাশে পরিশোধ করে দেয় প্রতারক চক্র।পঞ্চম ধাপে গিয়েই শুরু হয় প্রতারক চক্রের আসল প্রতারণা।
পঞ্চম ধাপে প্রতিটি টাস্ক সম্পন্ন করলেই তিনশো টাকা। তিনটি টাস্কে সম্পন্ন করলে নয়শত টাকা। চতুর্থ টাস্ক সম্পন্ন করতে আসে মহামারি অফার! দশ হাজার ৫০০ টাকা দিলেই চতুর্থ টাস্ক সম্পন্ন হবে। চতুর্থ টাস্ক সম্পন্ন করলেই মিলবে ১৫ হাজার টাকা নগদ এবং কমিশন পাঁচ হাজার টাকা প্লাস রিভিউ পেমেন্ট নয়শত টাকা। প্রতারক চক্রের এই মহামারি অফারের প্রথম অফার দশ হাজার থেকে শুরু লাখ টাকায় শেষ।
প্রথম থেকে ৬ হাজার ৫০০ টাকা রিভিউ প্রদানকারী ব্যক্তি বিকাশের মাধ্যমে পেমেন্ট পেলেও পরবর্তীতে আর টাকার মুখ দেখে না কেউ। শুরু হয় জিম্মি স্টাইলের প্রতারণা।টাস্কের প্রতারণা। প্রতারক চক্র নিজেরাই আগে থেকে তাদের ঐ টাস্ক প্রতারণার সদস্যদের ঠিক করে রাখে লাখ লাখ টাকার বাজি ধরতে। স্কীণশর্ট দিয়ে ঐ চক্র ব্যাংকে টাকা পেমেন্ট করার ভুয়া ডকুমেন্টস পাঠায় কয়েক মিনিটের মধ্যে। প্রতারক চক্রের এমন ভয়ংকর প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নিজের সঞ্চয়ের সব টাকা হারানো কয়েকজনের সাথে কথা বলে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানা যায়।
টেলিগ্রামে প্রতারকের ফটো
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে,প্রতারক চক্র হোয়াটসঅ্যাপে সুমাইয়া নাম ব্যবহার করে প্রথমে ম্যাসেজ পাঠায় এরপর জাহারা চৌধুরী নামে টেলিগ্রাম গ্রুপে নিয়ে যায় আরেকজন।পরবর্তীতে ০১৮০৬৮৯৮১৮৫,০১৯০২১৮৫৩১৯ নম্বরে বিকাশে লেনদেন করে।অপরদিকে টেলিগ্রামে শেখ ফাহিম নামে একজন মডারেটর থাকে। পরবর্তীতে আরেকটি গ্রুপে সংযুক্ত হয় লিন্ডা, অনিল,সুখন নামে অসংখ্য প্রতারক। ওরা টাস্ক সম্পন্নকারীকে উৎসাহ দেয় দ্রুত টাস্ক সম্পন্ন করে টাকা জিতে নিতে।কিন্তু দিনশেষে মোটা অংকের টাকা প্রতারক চক্রকে পরিশোধ করতে না পারায় আসল টাকাও হারান অনলাইনে এই প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা দেয়া মানুষ।