শুক্রবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ আর নেই

 

নিউজ ডেস্ক


বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) সভাপতি, এদেশের বাম আন্দোলন এবং সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম পুরাধা, মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ আর নেই। আজ শুক্রবার রাত ৭টা ৪৯ মিনিটে তিনি রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের জন্ম ১৯২২ সালে ১৪ এপ্রিল কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামে। বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছলো ৯৮ বৎসর।

অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের রাজনৈতিক জীবনের সূচনা ১৯৩৭ সালে। ছাত্রাবস্থায় বিট্রিশ বিরোধী ছাত্র সংগঠন ছাত্র ফেডারেশনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ঢাকা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতা করেছেন। ১৯৫২ সালে আজিমপুর সরকারী কলোনীর একটি ফ্ল্যাটে থাকতেন তিনি। তার এই ফ্ল্যাটটিই হয়ে উঠেছিল ভাষা আন্দোলনের হেডকোয়ার্টার। ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনা ছেড়ে তিনি পুরোপুরিভাবে রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হন। যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে কুমিল্লার দেবিদ্বার আসনে মুসলীম লীগের জাঁদরেল প্রার্থী মফিজউদ্দিনকে বিপুল ভোটে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১৯৫৭ সালের এপ্রিলে পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক পরিষদে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ আঞ্চলিক স্বায়ত্ত্বশাসনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। দলীয় নেতৃত্বের বিরোধীতা করে শেখ মুজিবুর রহমান মোজফফর আহমদের প্রস্তাবের পক্ষে দৃঢ়ভাবে সমর্থন দিয়েছিলেন এবং প্রস্তাবটি পাশ হয়েছিল।

১৯৫৭ সালের ২৭ জুলাই মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ন্যাপ গঠন প্রক্রিয়ায়ও একজন ছিলেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। ১৯৫৮ সালে আইউবের সামরিক শাসন মোজাফফর আহমদের বিরুদ্ধে হুলিয়া, গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি এবং ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করে। তিনি আত্মগোপনে থেকে আন্দোলনকে সংগঠিত করেন। ৮ বছর আত্মগোপনে থেকে ১৯৬৬ সালে আবার প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফিরে আসেন। ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি অবিভক্ত পাকিস্তান ন্যাপেরর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

১৯৭১ স্বাধীনতা সংগ্রামের মূল নেতৃতের একজন এবং প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেন। এ সময় তিনি জাতিসঙ্ঘেও বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ন্যাপ-সিপিবি-ছাত্র ইউনিয়নের বিশেষ গেরিলা বাহিনী গঠনে তার ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। সরকার ২০১৫ সালে অন্যদের সাথে তাকেও স্বাধীনতা পদক দেয়ার ঘোষণা করলে তিনি তা সবিনয়ে গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন। নিজেকে কুঁড়েঘরের মোজাফফর বলে পরিচয় দিতে ভালোবাসেন তিনি। তিনি জীবনে শেষদিনগুলিতে রাজধানীর বারিধারায় মেয়ের বাসায় জীবন-যাপন করতেন।

 

Comments are closed.

More News Of This Category