শনিবার, ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রসঙ্গ :কাশ্মীর

ভারত ভাঙনের সভাপতি হিসেবে নন্দিত হবেন মোদী’
‘কাশ্মীর অস্থিরতা নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেন সমাজ বিশ্লেষক সলিমুল্লাহ খান৷ কাশ্মিরীদের সম্মতি ছাড়া ‘বিশেষ মর্যাদা’ প্রত্যাহার ওই জনপদে কখনো শান্তি ফেরাবে না বলে মনে করেন এই তাত্ত্বিক।’
ডয়চেভেলে: কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বা বিজপেরি মূল রাজনীতি কি?
সলিমুল্লাহ খান: নরেন্দ্র মোদী বা বিজেপির রাজনীতি-যা-ই বলি না কেন, এটা পুরানো রাজনীতি৷ ভারতভাগের আগে থেকেই এই রাজনীতি ছিল৷ এটার সঙ্গে যাঁরা আছে, তাঁরা আসলে অখণ্ড ভারত চায়৷ এর মানে হলো, এখনও তাঁরা মনে করেন পাকিস্তান, বাংলাদেশকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করে নেবেন৷ এটা তাঁদের দীর্ঘমেয়াদি রাজনীতি৷ সেই কথা তাঁরা পরিষ্কার করে বলেছে নানা সময়ে৷ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী, যিনি হিন্দু মহাসভার সভাপতি ছিলেন, কংগ্রেসের মধ্যে যেসকল রাজনীতিবিদেরা ছিলেন, যেমন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল–তাঁদের বিভিন্ন  বক্তব্যের সময় সেটা বোঝা গেছে৷
ওই সময় লড়াই হয়েছে, সেই লড়াইয়ের ফলে দেশভাগ হয়েছে৷ সেই ভাগটা তাঁরা মেনে নিয়েছিলেন এরকম একটা আশায় যে, ভবিষ্যতে সবাই আবার তাঁদের সাথে যোগ হবে৷ সবিনয়ে বলি, গোটা রাজনীতিটাই একটা ভুল দৃষ্টিভঙ্গির ওপর প্রতিষ্ঠিত৷ গোটা তত্ত্বটাই গোড়াতে ভুল৷ ভারত একটা জাতি নয়৷ ভারতীয় জাতি বলে কোনো জাতি নেই৷ কখনো ছিলো না৷ ভারত হচ্ছে বিভিন্ন জাতির সমন্বয়ে একটা মহাদেশ৷ যেমন ধরা যাক, ইউরোপীয় বলে কোনো জাতি নেই৷ নানা সময় ফরাসীরা, জার্মানরা যুদ্ধ করেছে৷ ইংরেজরা জার্মানদের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে৷ পরে তাঁরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন করেছে৷ তারপরেও কেউ বলে না ইউরোপ একটা জাতি৷ বলতে পারেন, ইউরোপ একটা মহাদেশ, একটা মহাজাতি৷ ভারতও তাই৷ ভারতের সঙ্গে ইউরোপ তুলনীয়৷ সেখানে নানা জাতির যে স্বাধীনতার দাবি, সেটাই ঐতিহাসিকভাবে বাস্তব দাবি৷ শুধুমাত্র ইংরেজরা সারা ভারতকে এক জায়গায় এনেছিল কিছু দেশীয় রাজ্য বাদ দিয়ে৷ ভারত একটা সাম্রাজ্য পেয়েছিল মোঘলদের অধীনে৷ তাঁরও আগে হর্ষবর্ধন বা অশোক পর্যন্ত যান, একটা সাম্রাজ্য দেখা যায়৷ তাকে তো জাতি বলে না৷ জাতি ধারণাটি হচ্ছে আধুনিককালের ধারণা৷ গত চার/পাঁচশো বছরের ধারণা৷ তখন ভারতে মুঘল সাম্রাজ্য ছিল, মুঘল সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারি হয়েছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য৷ এখন তার উত্তরাধিকারী হয়েছে ভারতীয় সাম্রাজ্য৷ কিন্তু তাঁরা সাম্রাজ্য না বলে একটা জাতি বলে চালাতে চাচ্ছে৷ এটিই হচ্ছে গণ্ডগোলের মূল উৎস৷ বলতে পারেন, এটা একটি তাত্ত্বিক প্রশ্ন৷ কিন্তু আমি বলবো এটি ইতিহাসের প্রশ্ন৷ ভারত কখনো এক জাতি ছিলো না৷ ভারত উপমহাদেশ হচ্ছে নানা জাতির সমন্বয়ে, মাঝে মাঝে সাম্রাজ্য হয়েছে, মাঝে মাঝে স্বাধীন রাজ্যগুলি শাসিত হয়েছে৷ ভারতে সেই অর্থে কখনো গণতন্ত্রও ছিলো না৷
উপমহাদেশকে আমরা দক্ষিণ এশিয়া বলি, এখানে শ্রীলঙ্কা কেন আলাদা দেশ? নেপাল কেন আলাদা দেশ? এখনও পর্যন্ত ভুটান কেন আলাদা দেশ? পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশ কেন আলাদা দেশ হয়েছে৷ সেই একই যুক্তিতে কাশ্মীর তো আলাদা দেশ ছিলোই৷ কাশ্মীর ১৯৪৭ সালে ভারতের সঙ্গে যোগ দিয়েছে একটা ফাঁড়ায় পড়ে৷ সেই ফাঁড়াটা আর ব্যাখ্যা করার দরকরা নেই৷ সেটাকে বেঁধে রাখার জন্য ভারতের সঙ্গে তাঁরা একটা চুক্তিতে প্রবেশ করেছিলো৷ ভারত ইউনিয়নের সঙ্গে কাশ্মীরের চুক্তিটি ছিলো, যেটাকে আমরা ৩৭০ ধারা, ৩৫ (ক) ধারা বলি৷ এখন যাঁরা এটা দাবি করতে চাচ্ছেন, তাঁরা সেই ইতিহাসকে অস্বীকার করছেন৷ মানে তাঁরা একটা ঝুঁকি নিচ্ছেন৷ ঝুঁকিটা কি? তাঁরা কাশ্মীরকে ভারতের সঙ্গে একীভূত করে ফেলবেন৷ অর্থাৎ সেই চুক্তিকে তাঁরা লংঘন করবেন৷ তাঁরা খেয়াল করছেন না, এই চুক্তি লংঘন করলে তাঁরা কাশ্মীরের নেহায়েত দখলদার শক্তিতে পরিণত হলেন৷ এটা মেহবুবা মুফতি বলেছেন, এটা কংগ্রেস নেতা চিদাম্বরম বলেছেন৷ আমার আবিস্কারের কিছু নাই৷ অর্থাৎ কাশ্মীরকে অখণ্ড ভারতের অংশ হিসেবে গ্রহণ করার উল্টা পিঠ হলো, কাশ্মীরকে দখল করে রাখা৷ কাশ্মীরের জনগণের ইচ্ছে আছে কি নেই, সেই প্রশ্নটা ভারত তুলছে না৷
কাশ্মীরের সাধারণ মানুষের ভবিষ্যত কোন দিকে যাচ্ছে?
১৯৪৭সালের পর থেকে জাতিসংঘে এই প্রশ্নটা উঠেছিল যে, একসময় কাশ্মীরে গণভোট হবে৷ গণভোট না হোক, অন্তত ৩৭০ ধারা অনুসারে কাশ্মীরের যে প্রাদেশিক সভা, তার যে আইনসভা বা পার্লামেন্ট তার অনুমোদন নিতে হবে, যদি এই চুক্তি বাতিল করতে হয়৷ চুক্তি কখনো একতরফা বাতিল করা যায় না৷ কিন্তু ভারত এটা করছে, গায়ের জোরে৷ স্বীকার করি, সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে৷ কাশ্মীরের জনসংখ্যা খুব কম, এক কোটিরও কম৷ ভারতের জনসংখ্যা ১৩০ কোটি৷ অনেকে এটিকে গণতন্ত্র বলে, কিন্তু এটি গণতন্ত্র নয়৷ অর্থাৎ কাজটা শক্তি দিয়ে করা নাকি সম্মতি নিয়ে করা-এই প্রশ্নটা আসলে, কাজটি গণতান্ত্রিক নয়৷ আমি মনে করি এটা শুধু উপমহাদেশে নয়, ভারতেও দীর্ঘ অশান্তি তৈরি করবে৷ আমি সোজা কথায় বলবো, এটা ভারতীয় ইউনিয়নের ভাঙনের পথকে এগিয়ে নিয়ে গেল৷ নরেন্দ্র মোদী সেদিক থেকে ভারত ভাঙনের সভাপতি হিসেবে নন্দিত হবেন ভবিষ্যতে৷
আমার মনে হচ্ছে, কাশ্মীরে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না৷ ধরেন, ভারত তার সামরিক শক্তির জোরে অথবা সংখ্যা গরিষ্ঠতার জোরে এবং ভারতের প্রচার মাধ্যমের ( সামরিক বাহিনীর চেয়েও এখন শক্তিশালী) জোরে কাশ্মীরকে তারা রেখে দিল পায়ের নিচে চাপিয়ে৷ তারপর ধরেন, কাশ্মীরে বাইরে থেকে জনবসতি স্থাপনে সেটেলার নিয়ে গেল৷ এটা ইতিহাসের অনেক পরীক্ষিত ব্যাপার৷ আলজেরিয়াতে দেখেছেন ফরাসিরা কতো লোক নিয়ে গেছিল৷ তাঁদের ভাষায় বলছি, তাঁরা সেখানে প্রায় ১০/১২ লক্ষ লোক নিয়ে গেছিল-ফ্রান্স থেকে, ইটালি থেকে ইউরোপের দরিদ্র জনবসতি থেকে৷ কিন্তু সেটা কি আলজেরিয়াকে শান্ত করেছিল? আমার মনে হয়, কাশ্মীরে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে না এ পদ্ধতিতে৷
এ ঘটনা পাকিস্তান ও চীনকে কিভাবে আক্রান্ত করছে?
পাকিস্তান এখানে একটি পার্টি৷ কথা হচ্ছে পাকিস্তান একটা খারাপ পার্টি৷ সেটা ভারতকে ভালো করে তোলে না৷ ভারত বার বার পাকিস্তানের দোহাই দিয়ে নিজের আচরণের বৈধতা নিষ্পন্ন করার চেষ্টা করছে৷ পাকিস্তানও দাবি করেছে কাশ্মীর, ভারতও দাবি করেছে কাশ্মীর৷ আর কাশ্মীরে ‘কাশ্মীরিয়াত’ বলে একটা ব্যাপার আছে, তাঁরা কাশ্মীর দাবি করেছে৷ যেমন ধরুন, ১৯৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের সময়, বাংলাদেশকে ভারত উস্কানি দিচ্ছে একথা পাকিস্তান প্রচার করেছে৷ কিন্তু সত্যটা অন্তত পৃথিবীতে এখন পরিস্কার হয়েছে৷ বাংলাদেশের জনগণ না চাইলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না৷ সুতরাং কাশ্মীরের জনগণ কি চায়, সেটা আমাদের মূল প্রশ্ন হওয়া উচিত৷ ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী কিংবা শত্রু হিসেবে পাকিস্তান কাশ্মীর ইস্যুকে ব্যবহার করবে এটা খুব স্বাভাবিক ব্যাপার৷
চীনের অভিযোগ ভারত তার সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাত করছে৷ এটা কিভাবে? চীনের সমর্থন নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে যেতে  চায়  কিস্তান৷ ফলাফল কি  হতে পারে?
কাশ্মীরের পাশে তিনটি বৃহৎ শক্তি৷ চীন ১৯৬৪ সালে নিউক্লিয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে৷ অন্যরা তো তাকে বাধা দিতে পারেনি৷ ভারত অর্জন করেছে, পাকিস্তান অর্জন করেছে৷ তার মানে তিনটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ কাশ্মীরের চারপাশে৷ এটা কি আমাদের জন্য খুব শান্তির খবর হলো? পারমাণবিক শক্তি জিনিসটাই সারা পৃথিবীর জন্য বিপজ্জনক৷ আমার বক্তব্য হলো, এখানে চীনের ঐতিহাসিক দাবি আছে৷  যেটাকে আমরা বাংলায় বলি অক্ষয় চীন৷ কাশ্মীরের তিন ভাগের একভাগ তো চীনই দখল করে রেখেছে ১৯৬২ সাল থেকে৷ ভারতের একজন নেতা অমিত শাহ তো বলেছেনই, তারা চিনের কাছ থেকে ফেরৎ নেবে৷ গোটা কাশ্মীর তাঁরা নেবে, চীন যেটা দখল করে রেখেছে সেটাও ফেরৎ নেবে৷ এখানেই চীন তার সার্বভৌমত্বের ওপর আঘাতের কথা বলছে৷
এই অস্থিরতা গোটা দক্ষিণ এশিয়া তথা আঞ্চলিক রাজনীতিতে কেমন প্রভাব ফেলবে?
আমি তিন দেশের দাবি নিয়ে বলছি৷ দাবি নিয়ে বিরোধ আছে৷ সেই বিরোধ নিয়ে আন্তর্জাতিক আইনে পদ্ধতিও আছে মীমাংসা করার৷ যুদ্ধ একমাত্র পদ্ধতি নয়৷ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর প্রত্যেক জাতি অঙ্গীকার করেছে, সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য যুদ্ধকে মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করবো না৷ এখন ভারত পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের উত্তেজনা দেখা দিয়েছে, সেটা আমাদের কারো জন্য সুখকর নয়৷ আমরা যুদ্ধ চাই না৷ কিন্তু একই সাথে জনগনের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কোনো একটি জাতিকে দখল করে রাখা ঠিক নয়, আসলে রাখা যায় না৷
গত কয়েক দশকের রাজনীতিতে দেখা যায়, কোনো একটা ছুঁতো পেলেই পশ্চিমারা হস্তক্ষেপ করে বসে৷ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া, সিরিয়া-এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ৷ এ রকমকোনো আশঙ্কা আছে কি না?
জাতিসংঘ যে দলিলগুলো বহন করেছে, একটা হচ্ছে ১৯৪৮ সালের মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণা৷ সেই দলিলের ১৮ বছর পরে আরো দুটি প্রোটোকল গৃহিত হয়েছে৷ এই দুটোকে আমরা কোর অংশ হিসেবে মনে করি৷ সেখানে রাজনৈতিক দলিলের ২০ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, সমস্যা সমাধানের জন্য যুদ্ধের প্রচার করা যাবে না৷ সকলেই তাতে অঙ্গীকার করেন৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেকদিন তাতে স্বাক্ষর করেনি৷ তারা মনে করেছে যে, সমস্যা সমাধানে যুদ্ধ তাদের কাছে একটা বিকল্প হিসেবে শেষ তুরুপের তাসের মতো হাতে থাকবে৷
আমার কথা হচ্ছে, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর যুদ্ধ কোনোটা বন্ধ ছিলো? মহাযুদ্ধ হয়নি৷ স্থানীয় যুদ্ধ তো হয়েছে৷ ভিয়েতনামে কি হয়েছিলো? ঘোষণা ছাড়াই যুদ্ধ করেছে৷ আলজেরিয়াতে ফরাসিরা আট বছর যে যুদ্ধ চালিয়েছে, কিন্তু সেটাকে তারা আইনগতভাবে যুদ্ধ বলে স্বীকার করেনি৷ বলেছে সেটা পুলিশ অপারেশন৷
যখন দুটো রাষ্ট্র সংঘর্ষে জড়ায়, তখন সেটাকে যুদ্ধ বলে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করেনি৷ এভাবেই ইরাক, ইরানের প্রসঙ্গে যদি আসি, ইরানের ওপর একটা যুদ্ধের খড়গ ঝুলে আছে৷ ইরাকের ব্যাপারটাও আমরা সকলে জানি৷ প্রক্সি ওয়ার যেটা বলে, এটাই হচ্ছে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধোত্তর উদাহরণ৷
বর্তমানে আমার মনে হয় যে, কাশ্মীরে যে শক্তিগুলো জড়িত আছে চীন, ভারত ও পাকিস্তান-তারা সবাই পারমাণবিক শক্তিধর৷ পশ্চিমারা এখানে লড়বে, তবে সরাসরি নয়৷ তারা লড়বে এখানে প্রক্সির মাধ্যমে৷ এখানে একটা কথা আছে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর সঙ্গ যুদ্ধ করার মতো শক্তি আর কোনো আঞ্চলিক শক্তির নেই৷ পাকিস্তান যদি ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ করে থাকে, তবে যৌক্তিকভাবে পাকিস্তান পরাজিত হয়েছে, অথবা ড্র হয়েছে৷ যতোই আস্ফালন করুক না কেন, যুদ্ধ দিয়ে এটা মীমাংসা হবে না৷ আমার প্রার্থনা, যেন যুদ্ধ না হয়৷ কারণ যুদ্ধ কারো জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না৷
কিন্তু আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো যদি তাদের দায়িত্ব পালন করে, এখন ভারতের কংগ্রেসসহ অন্যরা যে দাবিটি করছে কাশ্মীরকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে, আমার মনে হয় আর পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে না৷ এর একটা হেস্ত নেস্ত হবে৷ কাশ্মীর হয় ভারতের অঙ্গীভূত হয়ে যাবে, সিকিমের মতো৷
সিকিমকেও কিছু আঞ্চলিক অধিকার দেয়া হয়েছে৷ নাগাল্যান্ড মিজোরামসহ অনেক এলাকার মধ্যে এই বিশেষ অধিকার আছে, তাহলে কাশ্মীরে বিলুপ্ত হবে কেন৷ যদিও আমি মনে করি এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি৷


কাশ্মীর প্রসঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থান-
বাংলাদেশ হয়তো এ বিষয়ে চুপচাপ থাকার নীতি নিয়েছে৷ নৈতিকভাবে এটি খুব একটা মহান নীতি নয়, আদর্শ নীতি নয়৷ কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান যে মিত্রতা ভারতের সাথে, সেটা এ ব্যাপারে বাংলাদেশকে চুপ থাকতে বাধ্য করছে৷
বাংলাদেশের ঘোষিত নীতি হচ্ছে, বাংলাদেশ নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ করবে৷ বাংলাদেশ কোনো যুদ্ধ জোটের অংশ হবে না৷ বাংলাদেশ এখানে কোনো পক্ষে যোগ দেবে না৷ বাংলাদেশ কারো সাথে সামরিক নীতিতে, সামরিক বন্ধনে আবদ্ধ নয়৷ মনে রাখতে হবে পাকিস্তান আমল থেকে আমাদের যে রাজনৈতিক নীতি ছিলো, সেটা হলো জোট নিরপেক্ষতা৷ আমি মনে করি বাংলাদেশ এখনো সেই নীতিতে অটল আছে৷ এবং থাকা উচিত৷ মানে সম্ভাব্য যুদ্ধের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নিরপেক্ষই থাকবে৷


সূত্রঃ ডয়চে ভেলে, জার্মান
 সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক থেকে :
Abdullah Harun Jewel লিখেছেন :
১.  কাশ্মীর এমন একটি রাজ্য যেখানে সবকিছুতে শতভাগ নিয়ন্ত্রণ মুসলিমদের। কাশ্মীরের অনেক এলাকা থেকে বিদ্যুৎ বিল আদায় করতে পারে না কেন্দ্রীয় সরকার। এটি পৃথিবীর একমাত্র রাজ্য যারা দেশের সংবিধানের ধারা না মানার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন; সেই ধারাটি হচ্ছে ভারতের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা নীতি না মানার ধারা।  এখানকার নেতারা রাজ্যে শরীয়া আইন চালুর কথা বলেন, কিন্তু দিল্লি পৌঁছে ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে যান। বিদেশে অনুষ্ঠিত ভারতের অনুষ্ঠানে ‘বন্দে মাতরম’ গাইলেও রাজ্যে জয় হিন্দ স্লোগান দেয়ার ইতিহাস নেই।
২. মুসলিমদের বিরুদ্ধে এথনিক ক্লিনজিং এর অভিযোগে যেসব ঘটনা উপস্থাপন করা হয়, তন্মধ্যে নির্মম ও ন্যাক্কারজনক ঘটনা হচ্ছে ১৯৯০ সালের হিন্দু উচ্ছেদ। কাশ্মীর থেকে সাড়ে তিন থেকে ৬ লাখ হিন্দু উৎখাত, হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। মসজিদে ঘোষণা দেয়া হয় – পুরুষ রাখবো না, শুধু যুবতীদের রেখে দিবো। এমন বর্বরতা ও নৃশংসতার উদাহরণ বোধহয় বিশ্বে খুব বেশি নেই।  উৎখাত হওয়া মানুষদের বড় একটি অংশ কখনো ট্রেনের স্লিপার দেখেনি, হাইওয়ে দেখেনি, তীব্র শীত ও তুষারপাতে জীবন বাঁচাতে পালিয়ে গেছে তারা। একজন মানুষ এগিয়ে আসে নি, একজন নেতা সমবেদনা জানায় নি, কোনো তদন্ত হয় নি, কেউ অভিযুক্ত নন। শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে।
৩. ভারত ভাগের পর কাশ্মীরের নাগরিকত্ব আইনের ধারা হয়েছে, ১৯৪৪ সালের পরে আসা কেউ নাগরিক হতে পারবে না, জমি ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে না। এর উদ্দেশ্য ছিল ১৯৪৬ সালের দাঙ্গায় পালিয়ে আসা হিন্দুদের স্থান না দেয়া। কিন্তু যুদ্ধ-ফেরত বিপুল সংখ্যক আফগান যোদ্ধা কাশ্মীরের নাগরিক হয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে অন্তর্ভুক্তি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে।
৪. কাশ্মীরে সাত লাখ দলিত বাস করে। আইন অনুসারে তারা মেথর চাপরাশির চাকরি করতে পারবে, উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পদ ভোগ করতে পারবে, কিন্তু নাগরিক হতে পারবে না, জমি কিনতে পারবে না। তাদের সন্তানদের দুই প্রজন্ম উচ্চ শিক্ষিত হয়েও রাজ্যে পদস্থ কোনো চাকরির যোগ্য হয় নি। অথচ এই কাশ্মীরে বিদেশি বিনিয়োগে পাঁচ তারকা হোটেল ও নাইট ক্লাব হয়েছে।
৫.  রোহিঙ্গাদের পর এবার কাশ্মীরের জঙ্গিদের আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। তারা জানেন না যে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সবচেয়ে বেশি অর্থ বরাদ্দ প্রাপ্ত রাজ্য হচ্ছে কাশ্মীর।
এমন আরও বিষয় উল্লেখ করা যায়। কিন্তু মূল প্রশ্ন হচ্ছে যারা কাশ্মীর নিয়ে উচ্চকণ্ঠ তারা কি জানেন তারা কি চান? রোহিঙ্গা নির্যাতনের প্রতিবাদে দিল্লিতে একটি বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছিল। সমাবেশ শেষে ফেরার পথে আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা বিশালাকারের দেবমুর্তিকে শায়েস্তা করে আসেন। এই আবেগময় মানুষদের বলে লাভ নেই আমি জানি। তবু জানতে ইচ্ছা করে –
আপনি চান কাশ্মীর আলাদা দেশ হবে – বেলুচিস্তানের স্বাধীনতা চান?
পাকিস্তান কি স্বাধীনতার জন্য কাশ্মীরের অধিকৃত অংশ ছেড়ে দিবে? অবশ্যই না।
তাহলে ভারতীয় অংশ স্বাধীন হবে? এই দাবি কি কাশ্মীরের সিংহভাগের? কাবুলিওয়ালা ছাড়া কাশ্মীরের একজন নেতা কি ভারত থেকে আলাদা হতে চায়? কাশ্মীরে যে বিক্ষোভ দেখি তা মাত্র পাঁচটি জেলার চিত্র। কাশ্মীরীদের আর্টিকেল ৩২৫ নিয়ে আপত্তি থাকতে পারে, সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, তবে ভারত থেকে আলাদা হয়ে যাওয়ার মানসিকতা এখনো সিংহভাগের নেই।
কাশ্মীর সমস্যার মূলে রয়েছে আইএসআইয়ের অনুসারী কিছু জঙ্গি সংগঠন, আফগানি ও জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের শক্তিশালী অপপ্রচারের শাখা রয়েছে যা ভারত সহ সারাবিশ্বে তৎপরতা চালাচ্ছে। কাশ্মীরের প্রতিটি সেক্টরে জামায়াত ঢুকে গেছে। এ কারণেই কাশ্মীরে জামায়াতকে ব্যান করা হয়েছে। আমার কাছে অবাক লেগেছে যে, ভোট ব্যাংকের জন্য প্রথমবারের মত ভারতে জাতীয় ইস্যুতে বিভক্তি দেখা গেল! ভারতের অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তিদের অনেকেও বিভ্রান্ত!
 সবকিছুতেই জামায়াত শিবির খোঁজা নিয়ে যারা কটাক্ষ করেন তারা মওদুদীবাদ সম্পর্কে অবগত নয় বলেই ধারণা করি। কাশ্মীর এর বড় উদাহরণ। আর বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্যও এই জামায়াত শিবিরই সবচেয়ে বড় হুমকি, যদিও তা সবাই উপলব্ধি করেন কিনা আমি সন্দিহান!”
মোস্তফা বাবুল লিখেছেন:
কতিপয় লোক আছে যারা কাশ্মীরী জনগণের ন্যায্যতা সম্পর্কে কিছু বললে বা লিখলে তারা মনে করে আমরা ভারত বিরোধী। আমরা ভারতবিরোধী নই, ভারতের নীতি নৈতিকতা ও আদর্শের বিরোধী। মোদি ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে কাশ্মীরীদের মর্যাদা ক্ষুন্ন করেছেন। এ অন্যায়ের বিরুদ্ধে ভারতের সর্বস্তরের জনগণ এবং বুদ্ধিজীবীগণ প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, মোদির এই নীতি ভারতের গণতন্ত্রকে গলা কাটার শামিল এবং এতে করে ভারতই টুকরো টুকরো হবে। মোদি মুসলমানদের অধিকার কেড়ে নিয়ে তাদের উপর জুলুম নির্যাতন চালাচ্ছে। কাশ্মীর সাতচল্লিশের পর থেকে অগ্নিগর্ভ। বারবার রক্ত ঝরছে সাধারণ মানুষের। কাশ্মীরের আপামর জনতার মতামতকে উপেক্ষা করে ভারতের সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন করে সংকট সৃষ্টি করছে। কাশ্মীরের জনগণের মৌলিক অধিকার চরম হুমকির মুখে। মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। এ ব্যাপারে বিশ্বনেতাদের উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। তা না হলে ভবিষ্যতে এই সংকট আরো বড় আকার ধারণ করবে।
ভারতীয় এক সাংবাদিক আমার লেখায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে প্রশ্ন করেছিলেন আপনি কি বাংলাদেশী নাকি পাকিস্তানপন্থি? আরেকটি প্রশ্ন ছিল আপনি কি প্রধানমন্ত্রীর বিপক্ষে? প্রসঙ্গত, কাশ্মীর ইস্যুতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এখনও কোন প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘‘এটা ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশ কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। ওই সাংবাদিকরে কলাম ঢাকার কাগজে ছাপা হয়। তিনি হুমকি দিয়ে বলছেন, আপনার পোস্টগুলো যথাযথা কর্তৃপক্ষের নিকট পেশ করা হয়েছে। সরকারকে বলা হবে ব্যবস্থা নিতে। স্বাধীন মত প্রকাশের উপর এমন নগ্ন হস্তক্ষেপ কিছুতেই মেনে নেওয়া যায়না। সাংবাদিক পরিচয়ে ভারতীয় এই এজেন্ট বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। তাকে বললাম- আপনাদের দাদাগিরি সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষ ওয়াকিবহাল। পারলে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তির নিকট আমার বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে পারেন। খবরে দেখলাম ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড, সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর তিন দিনের সফরে বাংলাদেশ এসেছেন। তিনি হয়তো কাশ্মীর ইস্যুতে বাংলাদেশের সমর্থন আদায়ে কূটনৈতিক চাপ দিবেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস বঙ্গবন্ধুকন্যা জাতির পিতার অনুসৃত পররাষ্টনীতি থেকে এক চুলও নড়বেন না। বঙ্গবন্ধুর জোট নিরপেক্ষ অবস্থানেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অটল থাকবেন। এটাই প্রত্যাশা।

Comments are closed.

More News Of This Category